
ধানচাষে কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে এবার ২৪ ঘণ্টার হেল্পলাইন চালু করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)। ধানের সার ব্যবস্থাপনা, আগাছা ও বালাই দমন, সেচ, রোগবালাই কিংবা আবহাওয়াজনিত সমস্যায় কৃষকেরা সপ্তাহের যেকোনো দিন যেকোনো সময় এই কল সেন্টারে ফোন করে বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিতে পারবেন। আজ গাজীপুরে ব্রির প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ সেবার উদ্বোধন করা হয়।
‘আবহাওয়ার পূর্বাভাসভিত্তিক কৃষি পরামর্শ প্রচারে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভূমিকা’ শীর্ষক এ কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ব্রির পরিচালক (গবেষণা) ও ব্রি এগ্রোমেট ল্যাবের প্রধান, ড. মো. রফিকুল ইসলাম।
প্রধান অতিথি ছিলেন ব্রির মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এগ্রোমেট ল্যাবের সমন্বয়ক ড. এবিএম জাহিদ হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কৃষি পরিসংখ্যান বিভাগের পিএসও ও ল্যাব সদস্য নিয়াজ মো. ফারহাত রহমান এবং ব্রির ঊর্ধ্বতন যোগাযোগ কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমিন।
মহাপরিচালক ড. খালেকুজ্জামান বলেন, বৈরি আবহাওয়া, রোগবালাই ও চাষের জটিলতায় কৃষকরা প্রায়ই বিপাকে পড়েন। এসব সমস্যা সমাধানে তাৎক্ষণিক সেবা পৌঁছে দিতে চালু হলো ব্রি হেল্পলাইন (০৯৬৪৪৩০০৩০০)। এখানে ফোন করলেই ব্রি এগ্রোমেট ল্যাবের বিজ্ঞানীরা সরাসরি কৃষকদের সহায়তা দেবেন। এতে কৃষকের উৎপাদন ব্যয় কমবে, ফলন বাড়বে এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
তিনি আরও জানান, স্বাধীনতার পর ব্রি ১২১টি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে, যার মধ্যে ৮টি হাইব্রিড এবং ৩৭টি জাত বৈরি পরিবেশ সহনশীল। সর্বশেষ ৬টি জাতের মধ্যে ৫টিই খরা, বন্যা, লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতা সহ্যক্ষম। একসময় একটি জাত উদ্ভাবনে যেখানে ২০ বছর লেগে যেত, এখন তা ১০ বছরেই সম্ভব হয়েছে। সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে ব্রি এগ্রোমেট ল্যাব নিরলসভাবে কাজ করছে।
ড. রফিকুল ইসলাম জানান, ১৯৭১ সালে মাথাপিছু জমি ছিল ২০ শতাংশ, বর্তমানে তা ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে ৪ গুণ। পতিত জমিকে চাষের আওতায় আনতে হবে এবং ধানি জমির পরিমাণ কোনোভাবেই ৬.২ মিলিয়ন হেক্টরের নিচে নামানো যাবে না। তিনি জানান, ব্রির সংগ্রহে রয়েছে ৯ হাজার ৬০০ দেশি জাত, যা গবেষণায় ব্যবহার হচ্ছে।
ড. এবিএম জাহিদ হোসেন তার উপস্থাপনায় জানান, গত কয়েক দশকে দেশের আবহাওয়ায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে, শীত কমেছে, বর্ষা দেরিতে শুরু হচ্ছে, এবং তাপমাত্রা বেড়েছে ১.৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসব পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে সময়মতো কৃষি সিদ্ধান্ত নিতে ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডার অপরিহার্য। তাই ব্রি স্মার্ট এগ্রো-এডভাইজরি ডেসিমিনেশন সিস্টেমের আওতায় দেশকে ৬ ভাগে ভাগ করে ২৯,৩৫৪ জন কৃষক ও সম্প্রসারণ কর্মীদের তথ্যভাণ্ডার তৈরি করেছে। লক্ষ্য ১.৫ লাখ কৃষকের কাছে সরাসরি তথ্য পৌঁছানো।
নিয়াজ মো. ফারহাত রহমান বলেন, গত ৫৪ বছরে দেশে কোনো পূর্ণাঙ্গ কৃষি তথ্যভাণ্ডার ছিল না। ব্রি সেই শূন্যস্থান পূরণে উদ্যোগ নিয়েছে। শুধু হেল্পলাইন নয়, ভবিষ্যতে অ্যাপ ও এসএমএসের মাধ্যমে আবহাওয়াভিত্তিক চাষাবাদের পরামর্শ পৌঁছে দেওয়া হবে।
সবশেষে বক্তারা বলেন, প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি বাস্তবায়নে মিডিয়া, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। গণমাধ্যমকর্মীরা এই তথ্য প্রচারে সক্রিয় হলে কৃষকের দোরগোড়ায় সহজেই সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।
Comments