Image description

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের সাউথ ওয়াজিরিস্তানে সামরিক বাহিনীর গাড়িবহরে জঙ্গি হামলায় অন্তত ১২ সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ভোর ৪টার দিকে পাহাড়ি এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, হামলায় ৪ জন সেনা আহত এবং পাল্টা অভিযানে ১৩ জঙ্গি নিহত হয়েছে।

হামলার দায় স্বীকার করেছে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি), যারা পাকিস্তানি তালেবান নামে পরিচিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি করে তারা জানায়, হামলার সময় সেনাবাহিনীর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও ড্রোন জব্দ করা হয়েছে।

আইএসপিআরের বিবৃতিতে বলা হয়, “সাউথ ওয়াজিরিস্তানের পাহাড়ি এলাকায় সামরিক গাড়িবহরে জঙ্গিরা উভয় দিক থেকে ভারী অস্ত্র নিয়ে গুলি চালায়। পাল্টাপাল্টি গোলাগুলিতে ১২ সেনা শহীদ এবং ৪ জন আহত হন। তবে সেনাবাহিনীর জবাবি হামলায় ১৩ জঙ্গি নিহত হয়।” হামলার পর এলাকায় ক্লিয়ারেন্স অপারেশন চলছে বলেও জানানো হয়।

স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তার বরাতে জানা গেছে, হামলার সময় জঙ্গিরা গাড়িবহরের অস্ত্র লুট করে নেয়। এই ঘটনাকে সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম প্রাণঘাতী হামলা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এলাকাটিতে সাধারণত সামরিক গাড়িবহর চলাচলের সময় কারফিউ জারি ও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। তবুও এমন হামলা কীভাবে সংঘটিত হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়রা জানান, ২০১৪ সালে সেনাবাহিনীর অপারেশন জারব-ই-আজবের পর টিটিপি এই অঞ্চল থেকে পিছু হটলেও, ২০২১ সালে আফগান তালেবানের ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে সীমান্ত এলাকায় জঙ্গি তৎপরতা বেড়েছে।

ইসলামাবাদ অভিযোগ করেছে, ভারতের সহায়তায় আফগান তালেবান পাকিস্তানি তালেবানকে আশ্রয় দিচ্ছে, যা এই হামলার পেছনে ভূমিকা রেখেছে। তবে ভারত ও আফগানিস্তান উভয়ই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

টিটিপি ২০০৭ সালে গঠিত একটি জঙ্গি জোট, যারা পাকিস্তান সরকারকে উৎখাত করে কঠোর শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে। গোষ্ঠীটির আফগান তালেবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও তাদের কার্যক্রম ও নেতৃত্ব কাঠামো পৃথক। ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী প্রত্যাহারের পর থেকে পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকায় টিটিপির হামলা বেড়েছে। এ বছর খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তানে জঙ্গি হামলায় প্রায় ৪৬০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য।

পাকিস্তান সরকার এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ও প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ শহীদ সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।