
বিশ্বের ইতিহাসে অনেক ক্ষমতাচ্যুত শাসক রাজনৈতিক অস্থিরতা, গণবিক্ষোভ বা আন্তর্জাতিক চাপের মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলিও সম্প্রতি সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন। তিনি পদত্যাগ করে হেলিকপ্টারে করে দেশ ছেড়েছেন এবং গুঞ্জন রয়েছে যে তিনি দুবাই অথবা ভারতে আশ্রয় নিতে পারেন।
শিকাগো ইউনিভার্সিটির 'দ্য জার্নাল অব পলিটিক্স'-এর একটি গবেষণা অনুযায়ী, ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচাররা আশ্রয় নেওয়ার জন্য কয়েকটি বিষয়কে প্রাধান্য দেন।
এর মধ্যে রয়েছে-
ভাষা, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় মিল: এমন দেশ যেখানে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিল রয়েছে।
ভৌগোলিক নৈকট্য: নিজ দেশ থেকে খুব বেশি দূরে নয় এমন দেশ।
আশ্রয়ের পূর্ব ইতিহাস: যেসব দেশ অতীতেও স্বৈরাচারদের আশ্রয় দিয়েছে।
সামরিক শক্তি: সামরিকভাবে শক্তিশালী দেশ।
গবেষণাটিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচাররা সাধারণত গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে আশ্রয় নিতে চান না।
বিভিন্ন দেশের ক্ষমতাচ্যুত শাসকদের আশ্রয়স্থল
১. মুসলিমপ্রধান দেশ: ইদি আমিন (উগান্ডা): ১৯৭৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে প্রথমে লিবিয়া ও ইরাকে এবং পরে সৌদি আরবে আশ্রয় নেন। সৌদি সরকার তার জীবনযাপনের খরচ বহন করত।
বেন আলী (তিউনিসিয়া): ২০১১ সালের গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে সৌদি আরবে আশ্রয় নেন।
নওয়াজ শরীফ (পাকিস্তান): ১৯৯৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে সৌদি আরব ও আমেরিকার মধ্যস্থতায় সৌদি আরবে নির্বাসনে যান।
২. পশ্চিমা দেশ ও প্রতিবেশী: ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ (ইউক্রেন): ২০১৪ সালের গণবিক্ষোভের পর রাশিয়ায় পালিয়ে যান এবং এখনো সেখানেই আছেন।
ফার্ডিনান্ড মার্কোস (ফিলিপিন্স): ১৯৮৬ সালে জনবিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্গত গুয়াম দ্বীপে আশ্রয় নেন।
থাকসিন শিনাওয়াত (থাইল্যান্ড): ২০০৬ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ১৫ বছর লন্ডনে নির্বাসনে ছিলেন।
পারভেজ মুশাররফ (পাকিস্তান): ২০০৮ সালে দেশ ছেড়ে প্রথমে লন্ডনে এবং পরে দুবাইতে যান, যেখানে তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন।
৩. অন্যান্য দেশ: আশরাফ ঘানি (আফগানিস্তান): ২০২১ সালে তালেবানের ক্ষমতা দখলের সময় সংযুক্ত আরব আমিরাতে আশ্রয় নেন।
গোটাবায়া রাজাপাকসা (শ্রীলঙ্কা): ২০২২ সালে গণআন্দোলনের মুখে প্রথমে সিঙ্গাপুর ও পরে থাইল্যান্ডে আশ্রয় নেন, এরপর দেশে ফিরে আসেন।
চার্লস টেলর (লাইবেরিয়া): গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ক্ষমতা ছেড়ে নাইজেরিয়ায় যান, কিন্তু যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করে ৫০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভি (ইরান): ইসলামী বিপ্লবের মুখে মিশর, মরক্কো, মেক্সিকো ও আমেরিকা ঘুরে শেষ পর্যন্ত মিশরে রাজনৈতিক আশ্রয় পান।
৪. সাম্প্রতিক পলায়ন: শেখ হাসিনা (বাংলাদেশ): ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে সামরিক হেলিকপ্টারে দেশ ত্যাগ করেন।
বাশার আল আসাদ (সিরিয়া): দীর্ঘ ২৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বিদ্রোহীদের চূড়ান্ত হামলার মুখে দামেস্ক ছেড়ে রাশিয়া চলে যান এবং সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় পান।
Comments