Image description

ঘোষণাটি আসে পাকিস্তানের ৭৮তম স্বাধীনতা দিবসের আগ মুহুর্তে। ১৩ আগস্ট দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ জানান, নতুন আর্মি রকেট ফোর্স কমান্ড (এআরএফসি) গঠন করা হয়েছে। এই কমান্ড আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সবদিক থেকে শত্রুর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।  

ইসলামাবাদে হওয়া অনুষ্ঠানে শাহবাজ শরিফ আরও জানান, যুদ্ধের সময় শত্রুকে মোকাবিলায় এটি পাকিস্তানকে আরও শক্তিশালী করবে।

পাকিস্তানে শত্রু বলতে সাধারণত ভারতকে বোঝানো হয়। প্রতিবেশী হলেও পারমাণবিক সক্ষমতায় দুই দেশই একে অপরকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে। আগামী সপ্তাহে ভারত মধ্যবর্তী পরিসরের আগ্নি-ভি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাবে। এমন সময় পাকিস্তান রকেট ফোর্স গঠনের কথা জানাল। যদিও বেশিরভাগ বিশ্লেষক মনে করছেন, ভারতের এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সঙ্গে পাকিস্তানের এআরএফসি গঠনের কোনো সম্পর্ক নেই। 

মে মাসের সংঘাতের সময় উভয়পক্ষ একে অপরের সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা, ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ও ড্রোন হামলা চালায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই সংঘাত পাকিস্তানের প্রতিরক্ষার কৌশলগত দুর্বলতা প্রকাশ করেছে। দেশটি প্রায় তিন দশক ধরে শুধু পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর নির্ভরশীল ছিল। পারমাণবিক অস্ত্রের কখন ব্যবহার হতে পারে সে বিষয়েও এতদিন তাদের অবস্থান অস্পষ্ট ছিল।

একটি ডেডিকেটেড রকেট ফোর্স গঠন করা সারা বিশ্বেই প্রচলিত। রাশিয়া-ইউক্রেন এবং ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতেও নিখুঁত লক্ষ্যের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের গুরুত্ব স্পষ্ট হয়েছে।

শাহবাজ শরিফ এআরএফসির কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেননি। তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি নতুন শাখা। দেশটির সামরিক কমান্ডের কাঠামো অনুযায়ী, পারমাণবিক অস্ত্র স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানস ডিভিশনের (এসপিডি) অধীনে থাকে। আর কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটির (এনসিএ) মাধ্যমে। এনসিএ হলো দেশটির পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র নীতির সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা। 

এক সময় এসপিডিতে কর্মরত ছিলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা নাঈম সালিক। তিনি বলেন, এআরএফসি পারমাণবিক সক্ষমতার অস্ত্রের পরিবর্তে রকেট ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দেবে। 

আরেক সাবেক সেনা কর্মকর্তা তুঘরাল ইয়ামিন বলছেন, ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের দক্ষতা বৃদ্ধি ও অভিযানের প্রস্তুতি বাড়ানোর জন্য এআরএফসি গঠন করা প্রয়োজন। এই কমান্ড হামলা প্রতিরোধ কিংবা সীমিত পরিসরের সংঘাত; উভয়ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। 

পাকিস্তানের কাছে বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র আছে। যেমন, সারফেস-টু-সারফেস, এয়ার-টু-সারফেস এবং সারফেস-টু-এয়ার সিস্টেম। এর মধ্যে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র পারমাণবিক ক্ষমতা সম্পন্ন। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এআরএফসি মূলত স্বল্প থেকে মধ্যম পরিসরের ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকবে।

তুঘরাল ইয়ামিন বলছেন, ‘পাকিস্তান তাদের প্রতিরক্ষা কৌশলে পরিবর্তন আনছে। এই কমান্ড গঠন সেটিরই অংশ।’ একই সুরে কথা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আলবানি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিশ্লেষক ক্রিস্টোফার ক্লারি। আল জাজিরাকে তিনি বলেন, পাকিস্তান তাদের পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনেছে। ভারতের সঙ্গে সংঘাতে ব্যবহারের জন্য তারা ইতোমধ্যে স্বল্প পরিসরের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে কাজ করছে।