মুন্সীগঞ্জে শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ কয়েকশ পরিবারের

বর্ষার এই মৌসুমে শাপলার যেমন হাট বসছে, তেমনি বাড়ি বাড়ি ফেরি করে বিক্রি হচ্ছে শহর সহ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। বাঙ্গালীর জাতীয় ফুল শাপলা সেই শাপলা এখন বেশ জনপ্রিয় শবজী তরকারি। শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান লৌহজং ও শ্রীনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কয়েক শতাধিক পরিবার।
লৌহজং ও শ্রীনগর বেশির ভাগই আলুর জমি চার থেকে পাচ মাস এখানে কৃষি জমি গুলো পানির নিচে থাকায় এ মৌসুমে কৃষকের তেমন কোনো কাজ নেই জমিতে। তাই এ খানকার অনেক কৃষক এ পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। কোনো পুঁজির প্রয়োজন না হওয়ায় বিভিন্ন বয়সের লোক এ পেশায় অংশ নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
শাপলা সাধারণত তরকারি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে দেশের এখন। শ্রীনগর ইউনিয়নের গাদিঘাট বিল থেকে শাপলা সংগ্রহকারী জলির মিয়া জানান, এ সময় একেক জন কমপক্ষে ৭০ থেকে ৮০ মুঠো সংগ্রহ করতে পারে। পাইকাররা আবার সংগ্রহকারীর কাছ থেকে এসব শাপলা সংগ্রহ করে একত্রে করে। সিরাজদীখানের রসুনিয়া, ইমামগঞ্জ তালতলায়, হাসাড়া ,ছন বাড়ীর মোড় ও আড়িয়াল বিলের পাশে শাপলার পাইকারি ক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এখান থেকে শাপলা ক্রয় করে ঢাকার যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন পাইকারি বাজারে বিক্রি করে থাকে।
ঢাকার পাইকার করিম মিঞা প্রতিবেদককে জানান, শাপলা সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে এক মুঠো শাপলা ২০ টাকা দরে ক্রয় করা হয়। তারপর গাড়ি ভাড়া গড়ে ৩ টাকা, লেবার ১ টাকা, আড়ত খরচ ২ টাকাসহ মোট ২৭ থেকে ২৮ টাকা খরচ পড়ে। ঢাকার যাত্রাবাড়ী আড়তে শাপলা বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা মুঠো। কোন রকম পুঁজি ছাড়াই শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন সিরাজদিখানসহ জেলার কয়েকশ পরিবার।
বর্ষার এই মৌসুমে কৃষক ও অভাবী লোকজন বেকার হয়ে শাপলা কুড়িয়ে তা বিক্রির পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন।
সূত্রমতে, বর্ষায় ডুবে যাওয়া ধান, পাট ও ধঞ্চে ক্ষেতে শাপলা বেশি জন্মায়। এছাড়া জেলার খাল-বিলগুলোতেও শাপলা ফুল জন্মে থাকে। আষাঢ় থেকে শুরু করে ভাদ্র মাস পর্যন্ত পাওয়া যায় শাপলা। শাপলা সংগ্রহকারীরা ভোরে নৌকা নিয়ে ডুবে যাওয়া জমিতে ও বিলের মধ্যে ঘুরে ঘুরে শাপলা তুলতে থাকেন।
কয়েকজন শাপলা সংগ্রহকারী জানান, এ সময়ে একেকজন কমপক্ষে ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ মোঠা (৭০-৮০ পিছ শাপলায় ১ মোঠা ধরা হয়) সংগ্রহ করতে পারে। পাইকাররা আবার এসব শাপলা সংগ্রহকারীর কাছ থেকে সংগ্রহ করে একত্রে করেন। দিন শেষে ৪০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা আয় করে থাকেন। বছরের ৪ মাস এ কাজ করেন ।সিরাজদিখানের রসুনিয়া, ইমামগঞ্জ ,লতিব্দী ও তালতলায় আর শ্রীনর উপজেলার হাসাড়াও আড়িওল বিলের পাইকারি ক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। পাইকাররা পরে ঢাকার যাত্রাবাড়ী পাইকারি বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন।
উপজেলার রসুনিয়া গ্রামের পাইকার সিরাজ মিয়া জানান, শাপলা সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার থেকে দুই হাজার মোঠা শাপলা ক্রয় করে থাকেন। সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে এক মোঠা শাপলা ২০-৩০ টাকা দরে ক্রয় করেন তিনি। তারপর ট্রাক ভাড়া গড়ে ৩ টাকা, লেবার ১ টাকা, আড়ত খরচ ২ টাকাসহ পায় ৩০ টাকার মতো খরচ পড়ে।
এই বিষয়ে শ্রীনগর কৃষি কর্মকর্তা মোহসিনা জাহান তোরন জানান শাপলা আসলে কোন কৃষি পণ্য আওয়াতাভুক্ত নয় এটি প্রাকৃতিক ভাবে কৃষি জমি ও পুকুর কিংবা ডোবাতে জন্ম নেয় ,এই বিষয়ে আমাদের কোন পরামর্শ দেয়ার সুযোগ হয়ে উঠে না তবে আমরা চেষ্টা করি কৃষক দের সহায়তা করার এছাড়া ও আমারা কৃষকদের শাপলা বেশি দিন সংরক্ষন করার পরামর্শ দিয়ে থাকি। তবে বেশির ভাগ শাপলা ঢাকাতে বক্রি হয়ে থাকে। শাপলা তরকারি হিসাবে খুবই মজাদার খাবার হওয়ায় এর চাহিদা ক্রমেই বেড়ে চলছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া দেশে বর্ষার এই মৌসুমে শাপলার যেমন হাট বসছে, তেমনি বাড়ি বাড়ি ফেরি করে বিক্রি হচ্ছে শহর সহ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। বাঙ্গালীর জাতীয় ফুল শাপলা সেই শাপলা এখন বেশ জনপ্রিয় শবজী তরকারি।
Comments