কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘চোরকাঁটাতে মাঠ রয়েছে ঢেকে, মাঝখানেতে পথ গিয়েছে বেঁকে’। বীরপুরুষ কবিতার সেই ‘চোরকাঁটা’ আমাদের প্রতিবেশী ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ।
চোরকাঁটা এক ধরনের ফুল। বলা যেতে পারে ঘাসের বিচিত্র ফুল। তবে সেই ফুল পাপড়িময় নয়। নয় সৌন্দর্যমুখর বা সৌরভশোভিত। এই ফুল আদ্যপান্ত কাঁটাযুক্ত। তবে কথা আছে! কাঁটা বলে কিন্তু লেবু বা গোলাপ গাছজাতীয় তীক্ষ্ম-তীব্র কাঁটা নয়। এই গুচ্ছময় কাঁটাগুলো মানুষের হাতে, পায়ে বা চামড়ায় বিঁধে না। এই কাঁটা খুব সহজেই বিঁধে যায় মানুষের পরিহিত পোশাকে। বেশিরভাগ সময়ই ফুলপ্যান্টের নিচের অংশে বিঁধে।
এই গ্রীষ্ম ঋতুতেই ওরা নিজেদের কাঁটাযুক্ত করে সাজিয়ে রেখেছে। ঘাসযুক্ত পথ দিয়ে আপনি যখনই অসাবধানতাবশত এগিয়ে যাবেন তখনই ওরা খুব স্বাভাবিকভাবে ঘিরে ধরবে! পরিহিত পেন্টে এসে বিঁধবে। ব্যাপারটি এত দ্রুতই হবে যে, আপনি টেরও পাবেন না। ওদের দলের ভেতর দিয়ে যতই অসাবধানতাবশত এগোতে থাকতেন ওরা ততই দলে দলে এসে আপনার পায়ের অংশের কাপড়ে বিঁধতে কোনো কার্পণ্য করবে না।
বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ (১২ খণ্ড) থেকে জানা যায়, ‘চোরকাঁটা’র বৈজ্ঞানিক নাম Chrysopogon aciculatus। এরা চড়ধপবধব পরিবারের উদ্ভিদ। চোরকাঁটার আঞ্চলিক নাম প্রেমকাঁটা, লেংরা প্রভৃতি। বাংলাদেশের সর্বত্রই পাওয়া যায়। পথিপার্শ্ব, পদদলিত তৃণভূমি ও চারণভূমিতে এদের দলগত বিস্তার। ভারত, চীন, অস্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য গ্রীষ্মপ্রধান দেশগুলোতে এদের বৈশ্বিক অবস্থান।
পুষ্পবিন্যাস পিরামিডের ন্যায় আকার বিশিষ্ট পেনিকল, ৪-১০ সেমি লম্বা, শক্ত, লালাভ, আরোহী শাখাযুক্ত, স্পাইকলেট সহজেই সন্ধিস্থল থেকে পৃথক হয়। অবৃন্তক স্পাইকলেট সরু উপবৃত্তাকার, ৩-৫ মিনি লম্বা, পরিঘাত কলা পর্বলগ্ন, সূচ্যাকার, সবৃন্তক স্পাইকলেট ভলাকার বা রৈখিক-ভল্লাকার ৪-৫ মিমি লম্বা, শূকবিহীন, বৃন্ত ২-৩ মিমি লম্বা, চ্যাপটা, রোমাশবিহীন।
চোরকাঁটা অনেকের কাছেই খুব বিরক্তিকর এক ব্যাপার! কেননা, বাসায় এসে সেই কাঁটাগুলো একটা একটা করে প্যান্ট থেকে তুলে তুলে ফেলে দিতে বেশ কিছু সময়টা ব্যয় হয়ে যায়। তখন আপনার যত তাড়াহুড়ো থাকে বিরক্তির মস্তিষ্করেখা ততই প্রগাঢ় হয়। তবে অন্যভাবে দেখলে, ব্যস্ততম জীবনযাপনের মাঝে এ যেন প্রকৃতিবিষয়ক এক অন্য রকমের স্পিডব্রেকার!
মানবকণ্ঠ/এফআই
Comments