Image description

মাথার উপর খা খা রোদ। মিষ্টি রোদ নয়, গা পুড়িয়ে দেওয়া রোদ। রোদ উপেক্ষা করে পালে দ্য ফেস্টিভ্যাল ভবনের চারপাশ জুড়ে অগণিত মানুষের উপস্থিতি। যার অধিকাংশই তরুণ-তরুণী। মানুষের এই উপস্থিতিই জানিয়ে দিচ্ছে কান চলচ্চিত্র উৎসব কতটা গুরুত্ব বিশ্ব চলচ্চিত্রের জন্য। কতটা আগ্রহের সিনেমা প্রেমিদের কাছে।

পালে দ্য ফেস্টিভ্যাল ভবনের দ্বিতীয় তলায় প্রেসবক্স। বিশ্বের তাবৎ বড় বড় গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের উপস্থিতি এখানে। ল্যাপটপ নিয়ে সবাই ব্যস্ত উৎসবের খবর মুহুর্তে ছড়িয়ে দিতে। এমন সময় হুট কর খবর আসে। পালে দ্য ফেস্টিভ্যাল ভবনে প্রবেশ করছেন বলিউড তারকা ঐশ্বরিয়া রাই। হুরমুর করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর গণমাধ্যমকর্মীরা ছুটলেন সে খবরে। একপ্রকার হুলস্থুল লেগে গেল যেনো। লাগবেই তো! ঐশ্বরিয়া বলে কথা। 

কানের লালগালিচায় ঐশ্বরিয়ার স্বাভাবিক সৌন্দর্য, ফ্যাশনবোধ আর স্টাইলিংয়ের মাধুর্যে ২১ বছর যাবত  মুগ্ধ হয়ে আসছে বিশ্ব। দু–একবার সমালোচিত যে হননি, তা–ও নয়। হয়েছেন প্রশংসিত, হয়েছেন ট্রলও। তবে সব কিছু ছাপিয়ে কানের রেড কার্পেটে আকর্ষণের মূল কেন্দ্রে থাকেন তিনি।

সর্বকালের সেরা এই বিশ্বসুন্দরী আসবেন শুনে সবাই ছুট দিবেন সেটাই স্বাভাবিক। ছুটলেনও। নাহ, উৎসবের দ্বিতীয় দিনে তিনি লাল গালিচায় হাটেননি। তাহলে পালে দ্য ফেস্টিভ্যাল ভবনে কেনো তার প্রবেশ! এসব প্রশ্নের উদ্রেক হওয়ার আগেই গণমাধ্যমকর্মীরা হাজির হয়ে গেলেন ভবনের পেছনের দরজায়। যে দরকার সামনে বড় করে সাদা রঙ্গে লেখা  ‘ইন্ট্রি দ্য আর্টিস্ট’। বেলা চারটা থেকে এই গেটেই ক্যামেরা হাতে দাঁড়িয়ে গেলেন গণমাধ্যমকর্মীরা। 

রেড কার্পেটে যে তারকারা হাঁটেন তারা মূলত এই গেট দিয়েই প্রবেশ করেন। বেরও হোন। তাই ঐশ্বরিয়াকে ক্যামেরার ধরবে বলে অপেক্ষা করতে থাকলেন সবাই। ৪টা থেকে পাঁচটা বাজে। নাহ ঐশ্বরিয়া প্রবেশ করেন না। বেরও হোন না। অপেক্ষা করতে করতে সন্ধ্যা সাতটা বেজে যায়। এরমধ্যে বের হয়ে আসেন মার্কিন অভিনেতা জেরেমি স্ট্রংসহ চেনা বা নাম না জানা একাধিক তারকা। কিন্তু ঐশ্বরিয়া আসেন না। রাত ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষার পরও আসেননি সাবেক এই বিশ্ব সুন্দরী।  বাধ্য হয়ে নিরাশ হয়ে ফিরে যান সবাই।

পরে খোঁজ নিয়ে যায় জানা যায় পালে দ্য ফেস্টিভ্যাল  ভবনে আসেননি ঐশ্বরিয়া। তার আসার কথাও ছিল না তাহল হুট করে এ খবর কিভাবে ছড়ালো? বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ থেকে আগত ফটোসাংবাদিক সাজ্জাদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, ‘এর আগে‘ইন্ট্রি দ্য আর্টিস্ট’ গেট থেকেই টম ক্রুজের ছবি তুলেছি। পরে জানলাম ঐশ্বরিয়া আসবেন। তার ছবি তুলতেই   ‘ইন্ট্রি দ্য আর্টিস্ট’ অপেক্ষা করলাম। কিন্তু পরে জানলাম তিনি আসেননি। রেড কার্পেটে আজ তিনি হাঁটবেন এমন কোনো শিডিউলও নেই। তবে দিনের মধ্যভাগে টমক্রজের ছবি তুলতে পেরেছি এটাই পরমপ্রাপ্তি আমার জন্য। সেই প্রাপ্তি নিয়েই আজ ফিরছি। তবে এটি এমন একটি জায়গায় যখন তখন যা কিছু ঘটে যেতে পারে।

ঐশ্বরিয়াকে নায়ে গণমাধ্যমকর্মীরা যখন মুখ ভাড় ও অতৃপ্তি নিয়ে ফিরছিলেন তখন সময় রাত ১০ টা। চারদিকে তখন অন্ধকার ভেধ করে আচড়ে পড়ছে নিয়ন আলো। কান সাগর তীর থেকে ভেসে আসছে গান-বাধ্যের মুর্ছনা। কিছুদূর এগোতেই গান-বাধ্যের মুর্ছনায় ঐশ্বরিয়াকে না পাওয়ার অতৃপ্তি দূর হয়ে গেল যেনো!

গত ১৩ মে দক্ষিণ ফ্রান্সের কান শহরের পালে দে ফেস্টিভ্যালে শুরু হয়েছে ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসব। আসর চলবে ২৪ মে পর্যন্ত। উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক লালগালিচা পর্ব, যেখানে বিশ্বের খ্যাতিমান অভিনেত্রী, গায়িকা ও মডেলরা বাহারি পোশাকে হাঁটেন।

এবারের আসরে মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে নির্বাচিত হয়েছে ২২টি চলচ্চিত্র। এছাড়া ‘আঁ সার্তে রিগা’, ‘আউট অব কম্পিটিশন’, ‘মিডনাইট স্ক্রিনিংস’, ‘কান প্রিমিয়ার’ এবং ‘স্পেশাল স্ক্রিনিংস’-প্রতিটি বিভাগেই দেখা যাবে নানা ঘরানার, নানা দেশের চলচ্চিত্র।