
দুর্বল ব্যাংকগুলোর পুনর্গঠনের জন্য প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার একটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত সপ্তাহে দেশের একটি প্রভাবশালী ইংরেজি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানান, “আগামী এক মাসের মধ্যে প্রথম ধাপের কাজ শুরু হবে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে কয়েকটি ব্যাংকের পুনর্গঠন সম্পন্ন হবে।”
এই সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের একটি অংশ জাতীয় বাজেট এবং উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে আসবে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার এবং বিশ্বব্যাংক ১ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সংস্কার প্রক্রিয়া প্রথমে পাঁচটি ব্যাংক—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংক—নিয়ে শুরু হবে। তবে বিদেশি বিনিয়োগ থাকায় আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের জন্য ভিন্ন সমাধান প্রয়োজন হবে। সংস্কারের অংশ হিসেবে বাকি ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণের সম্ভাবনাও রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য জাহিদ হোসেন বলেন, “মূলধন জোগান ছাড়া কোনো উপায় নেই। তবে একীভূতকরণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর ভবিষ্যৎ ব্যবসায়িক পরিকল্পনা আর্থিকভাবে টেকসই হতে হবে।” তিনি আরও জানান, ডিসেম্বরের মধ্যে পাঁচটি ব্যাংকের একীভূতকরণ সম্ভব।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জোর দিয়ে বলেন, “সরকার ইক্যুইটি বা ঋণ—যে পদ্ধতিতেই মূলধন দিক না কেন, তা সুদসহ ফেরত নেওয়া হবে। এতে সরকারের কোনো আর্থিক ক্ষতি হবে না।”
বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে সম্পদের শ্রেণিবিভাগ ও প্রভিশনিং নিয়ম পালন হচ্ছে কি না, তা যাচাইয়ে দাতা সংস্থার সহায়তায় ‘অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ’ (একিউআর) শুরু হয়েছে। মোট ১৭টি বেসরকারি ব্যাংকে পর্যায়ক্রমে এই নিরীক্ষা চলবে। প্রথম ধাপে কেপিএমজি এবং আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং শ্রীলঙ্কা ছয়টি ব্যাংকের নিরীক্ষা সম্পন্ন করেছে, যা গত মে মাসে শেষ হয়। বাকি ১১টি ব্যাংকের নিরীক্ষা দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে।
গত মে মাসের নিরীক্ষায় ব্যাংক খাতে বড় ধরনের মূলধন ঘাটতি প্রকাশ পেয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের সম্মিলিত মূলধন ঘাটতি ছিল প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা, যা পরবর্তীতে আরও বেড়েছে।
সম্পদের মানের সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ত্রিস্তরীয় প্রশাসনিক কাঠামো গঠন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে বাস্তবায়ন, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ও স্টিয়ারিং কমিটি। এছাড়া আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও এডিবির প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের একিউআর তদারকি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, চলতি বাজেটে ব্যাংক পুনর্গঠনের জন্য ১৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘বিবিধ ব্যয়’ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ১৭ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা করা হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ১৬৩ শতাংশ বেশি।
Comments