Image description

আগামী বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় কাটছাঁট করে ঘাটতি কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হলেও সরকারি কর্মচারীদের জন্য ‘বিশেষ সুবিধা’ নাম দিয়ে বরাদ্দ রেখেছে অন্তবর্তী সরকার। অর্থনীতি যখন ‘চাপে’ রয়েছে তখন এই ব্যয়কে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ বলছেন অর্থনীতিবদরা।

প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক ৬২ শতাংশের সমান।

সোমবার বেলা ৩টায় আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। চলতি অর্থবছরের চেয়ে যা ৭ হাজার কোটি টাকা কম।

তবে প্রস্তাবিত এই ব্যয় বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের (৭ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা) চেয়ে ৬.১৮ শতাংশ বেশি। টাকার ওই অংক বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১২.৬৫ শতাংশের সমান।

বিদায়ী অর্থবছরে বিগত সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর দেওয়া বাজেটের আকার ছিল ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটের ১১.৫৬ শতাংশ বেশি এবং জিডিপির ১৪.২৪ শতাংশের সমান।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় কমানো হয়েছে ৩৫ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা। এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা।

উন্নয়ন ব্যয় কামানোর মধ্যে শুধু বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) খাতেই চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়েছে কমেছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। আর সংশোধিত এডিপির চেয়ে কমেছে ১৪ হাজার কোটি টাকা।

বিদায়ী অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। সংশোধন করে তা ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।

উন্নয়ন ব্যয় বেশি হওয়া মানেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পেয়ে দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ে। বাজেটে তা কমিয়ে আনায় কর্মসংস্থান বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় প্রভাব পড়ার শঙ্কা থেকে যায়।

তবে উন্নয়ন ব্যয়ে দুর্নীতি, অনিয়মগুলো সামাল দিতে পারলে কর্মসংস্থানে প্রভাব পড়বে না মন্তব্য করে সাইফুদ্দিন খান বলেন, “যেকোনোভাবেই হোক দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। অনিয়ম না হলে, উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারলে সমস্যা হবে না।”

মোটা দাগে বাজেটে সর্বোচ্চ ব্যয় হয় পরিচালন খাতে। আসছে অর্থবছরের বাজেটে তা ২৮ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা।

সরকারি কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য না দিলেও তাদের জন্য ‘বিশেষ সুবিধার’ পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, “২০১৫ সালের পর কোনো বেতন কাঠামো না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।”

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “এবারের বাজেটে পরিচালন ব্যয়ে উত্তরাধিকারের প্রভাবটাই সবচেয়ে বেশ, এই ব্যয়টা প্রশ্নবিদ্ধ। এছাড়া ব্যয় খাতে কোনো চমক দেখা যায়নি।”

সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতার পেছনে ব্যয় বৃদ্ধির সমালোচনা করেছেন সাইফুদ্দিন খানও। অর্থনীতি ‘স্বাভাবিক ছন্দে’ না ফেরায় কিছুটা ‘সংকট’ তো রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সরকার পরিচালন ব্যয় কমাতে পারতো। এই সময়ে পরিচালন ব্যয় বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল না। দুর্ভোগে তো সবাই আছে, শুধু সরকারি কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো আরো পরে করা যেত।”