
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন পর বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। আত্মবিশ্বাসে ভরপুর আশিক চৌধুরী দায়িত্ব নিয়েই বিনিয়োগ বিষয়ে একের পর এক প্রচারণামূলক কর্মকাণ্ডে উদ্যোগী হন।
বিনিয়োগ আকৃষ্টে ইনভেস্টমেন্ট সামিট আয়োজন, স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা পেতে ইলন মাস্কের স্টারলিংকের নিবন্ধন, মহাকাশ অনুসন্ধানে নাসার সঙ্গে চুক্তি, সব বিনিয়োগ প্রচারণা সংস্থাকে একই ছাদের নিচে নিয়ে আসা-এমন নানান উদ্যোগ গ্রহণ করে সাড়া ফেলে দেন। বিশেষ করে বিনিয়োগ সামিটে আসা অতিথিদের সামনে তার দেওয়া উপস্থাপনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসিত হয়।
নিয়োগ পাওয়ার পর গত সাত মাসে দেশের বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করতে এবং বিনিয়োগ আকর্ষণে নানা উদ্যোগ নিলেও তার প্রকৃত প্রতিফল এখনো দৃশ্যমান নয়। এ সময় বিডায় নিবন্ধিত বিনিয়োগ প্রস্তাবের সংখ্যা যেমন নিম্নমুখী, তেমনি কমেছে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের নিট প্রবাহ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে বিদেশি ও দেশি বিনিয়োগের হার সব সময়ই কম ছিল। বিনিয়োগকারীরা অনেক ধরনের বিষয় চিন্তা করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যালান্স অব পেমেন্টের (বিওপি) পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস জুলাই থেকে মার্চে এফডিআইয়ের নিট প্রবাহ ছিল ৮৬ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে নিট এফডিআই প্রবাহ ছিল ১১৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এ হিসাবে চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে এফডিআইয়ের নিট প্রবাহ কমেছে ২৬ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উইকলি সিলেকটেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরসের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস জুলাই থেকে মার্চে মূলধনি যন্ত্র আমদানির ঋণপত্র নিষ্পত্তি বা আমদানি বাবদ অর্থ পরিশোধ হয়েছে ১৫২ কোটি ১৫ লাখ ৫০ হাজার ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছিল ২১৩ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের। অর্থাৎ মূলধনি যন্ত্র আমদানি কমেছে ২৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে এমন সম্ভাবনাময় দেশ চিহ্নিত করে তাদের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে গেল বছরের ১৮ নভেম্বর হিটম্যাপ তৈরির পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করে বিডা।
সেই ঘোষণায় বিডা চেয়ারম্যান বলেন, এত দিন বিনিয়োগ প্রচারে আমাদের সক্রিয়তার অভাব ছিল। এখন আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টে তথ্যভিত্তিক কৌশলগত প্রচার করতে চাই। এ কারণে একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় একটি এফডিআই হিটম্যাপ তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। তিনি বলেন, এটা শুধু পরিকল্পনা নয়, আমাদের ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ প্রচেষ্টার একটি রূপরেখা। বিনিয়োগ আকৃষ্টে আশিক চৌধুরীর এসব কার্যক্রম বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। বিনিয়োগ সম্মেলনের শেষদিকে অনেক গণমাধ্যমে বলা হয়, ‘আশিক ম্যাজিকে’ বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগের প্রত্যাশা। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রকৃত বিনিয়োগে ‘আশিক ম্যাজিকে’র প্রতিফলন এখনো দৃশ্যমান হতে শুরু করেনি।
স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা বলছেন, দেশে অবস্থান করা বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশে বিনিয়োগে ইতিবাচক মনোভাব দেখা যাচ্ছে না। সম্প্রতি বাংলাদেশি এক বিনিয়োগকারীর প্রশ্নের জবাবে এক রাষ্ট্রদূত বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য রাজনৈতিক সরকারের অপেক্ষায় রয়েছেন। এ ছাড়া বিনিয়োগ আকর্ষণ নির্ভর করে আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে কী ধরনের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে তার ওপর। বাংলাদেশের স্থানীয় বিনিয়োগকারীরাই বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না, এ পরিস্থিতিতে বিদেশিরা কীভাবে বিনিয়োগ করবেন?
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য রাজনৈতিক সরকারের অপেক্ষায় রয়েছেন। তাদের মতে, দেশে ব্যাংকঋণের সুদহার এখন ১৫ শতাংশের বেশি। এত বেশি সুদের হার দিয়ে এখানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে না কেউ। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের তুলনায় আমাদের এখানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবহন ব্যয়ও অনেক বেশি। রয়েছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতাও। এমন অবস্থায় বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়া সহজ হবে না।
সূত্র : বণিক বার্তা
Comments