
সুদের টাকা দিতে না পারায় শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলায় এক ব্যবসায়ীকে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে গাছে বেঁধে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে এক মহাজনের বিরুদ্ধে। এই নির্যাতনের একটি ভিডিও সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। উপজেলার খরিয়া কাজীরচরের ভাটি লঙ্গরপাড়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভাটি লঙ্গরপাড়া গ্রামের মাদ্রাসা পিয়ন ও ব্যবসায়ী নূর আমিন (৩৮) একই এলাকার সুদে কারবারি আব্দুল জলিলের কাছ থেকে মাসিক ১০ হাজার টাকা সুদের শর্তে ১ লাখ টাকা ধার নেন। নূর আমিন চার মাস ধরে ১০ হাজার টাকা করে সুদ পরিশোধ করলেও পরবর্তীতে আর দিতে পারেননি। এ নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই কথা কাটাকাটি হতো এবং নূর আমিনকে লাঞ্ছিতও করা হতো।
জানা যায়, আব্দুল জলিল নূর আমিনের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ এনে আদালতে নালিশও করেছিলেন, যদিও নূর আমিন সেই অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন। কিছুদিন পর জলিল ভুক্তভোগীর একটি মোটরসাইকেল আটকে রাখেন। এ বিষয়ে নূর আমিন থানায় অভিযোগ দিলে তাদের সম্পর্ক আরও খারাপ হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত রোববার আব্দুল জলিল কয়েকজনকে পাঠিয়ে নূর আমিনকে লঙ্গরপাড়া বাজার থেকে ধরে আনেন।
অভিযোগ উঠেছে, এরপরই নূর আমিনকে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে বাড়ির একটি গাছে বেঁধে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়। স্থানীয় সূত্রগুলোর দাবি, জলিলের বাড়ির সবাই মিলে তাকে লাঠিপেটা করে এবং তার শরীরের কাপড় ছিঁড়ে ফেলে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, দুই হাত গাছে বাঁধা অবস্থায় নূর আমিনকে একজন নারী জামার কলার ধরে নির্যাতন করছেন।
ভিডিওতে নূর আমিনকে মারধর করার সময় বলতে শোনা যায়, "এ ... একটা গরু চোর, তাই ধইরি (ধরে) বান্ধিছি। মাইনষের টাইন (কাছ থেকে) ট্যাহা নিছে। আংগর টাইন ৬ লাখ ট্যাহা নিছে।"
ঘটনা জানাজানি হলে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আশরাফুল কবীর রূপা ঘটনাস্থলে যান। তিনি দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা করে বিষয়টি সুরাহা করেন। বিএনপি নেতা বলেন, "সেখানে শত শত মানুষ ছিল। দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে আগামী আগস্ট মাসে টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে নূরকে মুক্ত করি।"
অভিযুক্ত আব্দুল জলিল বলেন, "অনেক দিন ধরে দেড় লাখ টাকা পাই। তাকে বাজার থেকে ধরে এনেছিলাম, নির্যাতন করা হয়নি। বাড়ি আনার পর খারাপ আচরণ করায় বেঁধে রেখেছিলাম। নেতারা সমঝোতা করে দেওয়ায় ছেড়ে দিয়েছি।"
ভুক্তভোগী নূর আমিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, "জীবনে কোনোদিন এত অপমান কেউ করেনি। মারধর করেছে, অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছে। সুদের টাকার জন্য এক বছর ধরে আমার মোটরসাইকেল আটকে রেখেছে। টাকাও দাবি করছে। মাসে ১০ হাজার করে চার মাস টাকা দিয়েছি। এখন আসল টাকা পাবেন ৬০ হাজার।"
এ বিষয়ে শ্রীবরদী থানার ওসি মো. আনোয়ার জাহিদ জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল, তবে তার আগেই স্থানীয় নেতারা বিষয়টি সমঝোতা করে ফেলেন। তিনি ভুক্তভোগীকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছেন এবং অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।
Comments