Image description

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুই বংশের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন এবং ১০টি বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ জুন) সকালে উপজেলার শিমুলকান্দি ইউনিয়নের তুলাকান্দি গ্রামের মুন্সি বাড়ি বংশের সঙ্গে বাদার বাড়ির বংশের এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ভৈরব থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ খন্দকার ফুয়াদ রুহানি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তুলাকান্দি গ্রামের মুন্সি বাড়ি বংশ ও বাদার বাড়ির বংশের মধ্যে দীর্ঘদিনের শত্রুতা চলে আসছিল। সোমবার মুন্সি বাড়ির যুবকেরা তাদের নিজস্ব মাঠে ফুটবল খেলতে গেলে বাদার বাড়ির যুবকেরা একই মাঠে খেলতে চেয়ে তাদের বাধা দেয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হলে স্থানীয়রা বিষয়টি মীমাংসার আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। তবে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে বাদার বাড়ির বংশের এক যুবককে মুন্সি বাড়ির যুবকেরা মারধর করলে পরিস্থিতি চরমে পৌঁছায়। এর পরপরই উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়। দা, বল্লম, টেঁটা, লাঠি সোঁটা, ও ইট-পাটকেল নিয়ে দুই পক্ষ একে অপরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এই ঘটনায় উভয় পক্ষের ২৫ জন নারী-পুরুষ আহত হন এবং অন্তত ১০টি বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।

সংঘর্ষে বাদার বাড়ির বংশের আহতরা হলেন: আশরাফুল (১২), মিষ্টু মিয়া (২৬), সিয়াম মিয়া (১৫), কাউসার মিয়া (১৫), ফেরদৌস আহমেদ (১৬), সুমন মিয়া (২৮), আলাল উদ্দিন (৩৫), ও সহেদ মিয়া (৪০)।

অন্যদিকে, মুন্সি বাড়ির বংশের আহতরা হলেন: জামাল মিয়া (৯০), বাসির মিয়া (৩০), নজরুল ইসলাম (৪৫), আঙুর মিয়া (৪০), অমিত হাসান (১৮), স্বাধীন (২২), সিয়াম (২২), নিলয় (১৭), জুনাত (৩৩), সোহাগ মিয়া (৩০), রুনা বেগম (৩৭), ও নাদিয়া বেগম (৪০)। এছাড়াও উভয় পক্ষের আরও ৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক উম্মে হাবীবা জুঁই জানান, তুলাকান্দি গ্রামের মারামারির ঘটনায় আহত ১২ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে ১০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের অনেকেই ভৈরবের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসা নিয়েছেন।

বাদার বাড়ির বংশের আকবর ফকির জানান, তাদের বংশের তিনজন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং দুজনকে বাজিতপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

মুন্সি বাড়ির বংশের নজরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, সোমবার বিকেলে তার ছেলে ইয়ামিনসহ তাদের বংশের যুবকেরা নিজেদের জমিতে ফুটবল খেলতে গেলে বাদার বাড়ির যুবকেরা বাধা দেয় ও মারধর করে। তাদের আরেক ছেলে প্রতিবাদ করতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়। স্থানীয় নেতারা মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তা হয়নি। আজ সকালে বাদার বাড়ির লোকজন তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। তাদের বংশের ১৫ জন নারী-পুরুষ আহত হয়েছেন।

বাদার বাড়ির বংশের আকবর ফকিরের দাবি, সামান্য ফুটবল খেলা নিয়ে গত ৯ জুন যুবকেরা মারামারি করেছিল। স্থানীয় নেতারা মীমাংসার সময় দিলেও মুন্সি বাড়ির লোকজন আজ সকালে তাদের বংশের একজনকে মারধর করে। এরপরই তারা তাদের বাড়িঘরে হামলা চালায়। তাদের হামলায় তাদের বংশের ১০ জন নারী-পুরুষ আহত হয়েছেন।

ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ খন্দকার ফুয়াদ রুহানি জানান, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়েছে। উভয়পক্ষ হাসপাতালে এসেও আবারও সংঘর্ষে জড়ানোর চেষ্টা করলে সেখানেও পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। বর্তমানে তুলাকান্দি এলাকায় পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। উভয় পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।