Image description

কুড়িগ্রামের রাজীবপুরে ওয়ারেন্টের কথা বলে আবু বক্কর (৫০) নামের এক কৃষককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে থানায় যায় পুলিশ। পরে তাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বানিয়ে জামায়াতের দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। রাজীবপুর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের শিবেরডাঙ্গী দক্ষিণ পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। 

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও উঠেছে ব্যাপক সমালোচনার ঝড়। এ ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার দুপুরে একটি সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগির পরিবার। 

গ্রেপ্তার হওয়া ভুক্তিভোগি কৃষক আবু বক্কর উপজেলার সদর ইউনিয়নের শিবেরডাঙ্গী এলাকার মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, ভুক্তভোগি কৃষক আবু বক্করের ভাতিজা শরিফ। তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে চাচা আবু বক্করের নিজ বাড়িতে হঠাৎ করে ঢুকে পড়ে রাজীবপুর থানা পুলিশের একটি দল। এ সময় জিজ্ঞাসা করলে ওই পুলিশ সদস্যরা তার চাচাকে বলেন, আপনার নামে ওয়ারেন্ট রয়েছে। এই কথা বলে চাচা কৃষক আবু বক্করকে গাড়িতে করে তুলে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে থানায় গিয়ে জানতে পান, তার চাচা আবু বক্করকে রাজীবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বানিয়ে রাজীবপুর উপজেলা জামায়াতের দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।

তিনি আর বলেন, আমার চাচা একজন কৃষক, আমরা ও আমার চাচা আবু বক্কর কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নই। কে বা কারা ষড়যন্ত্র করে পুলিশকে দিয়ে আমার চাচাকে গ্রেপ্তার করানো হয়েছে। এই মিথ্যা মামলার  প্রতিবাদ জানান ও সরকারের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চান তিনি।

ভুক্তভোগির স্ত্রী সুখিতন নেছা বলেন, ‘আমার স্বামী কোনো দল করে না। কৃষি কাজ করে খাই। তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। এর সুষ্ঠু বিচার চান তিনি।’

ভুক্তভোগির ছেলে রাসেল মিয়া অভিযোগ করেন বলেন, ‘আমার বাবা কোনো রাজনীতি করেনি। তারপরও মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।’ 

স্থানীয় জাহাঙ্গীর, আব্দুল করিম বলেন, ‘আবু বক্কর একজন অত্যন্ত ভালো মানুষ। এক সঙ্গে কৃষি কাজ করেন ও তিনি মাছও চাষ করে জীবন চালান। কৃষি কাজ নিয়ে ব্যস্ত। তার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিপ্ত দেখেননি তারা।’
  
রাজীবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা প্রশাসনের দুরভিসন্ধি। ওই এলাকায় হয়তো কারো সঙ্গে দ্বন্দ্ব ছিল, প্রশাসন টাকা পয়সা খেয়ে এই কাজ করে দিয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, আমি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও। আমার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগে নাম নেই কোথাও। উনি যে আওয়ামী লীগ করে আমার জানা নাই। কোনো দিন আওয়ামী লীগের কোনো প্রোগ্রামে দেখিনি।’ 

গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজীবপুর উপজেলা জামায়াতের আমীর আব্দুল লতিফ বলেন, আমি আবু বক্করকে চিনি না। এটা দৃষ্টিকটুর। আমরাতো তার নামে মামলা দেইনি। আমরা পুলিশকে বার বার বলি, অজ্ঞাতনামা কোনো আসামীকে যদি গ্রেপ্তার করতে চান, তাহলে আমাদেরকে জানাতে হবে। বার বার বলার পরও পুলিশ এটা কিভাবে করে। এর আগেও মুকুল নামের এক ব্যক্তিও পুলিশ আটক করছিল বলে জানান তিনি। 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদশক (এসআই) আতিকুর জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা একটু পরে কথা বলবেন বলে পাশ কাটিয়ে যান তিনি।  

রাজীবপুর থানার ওসি শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘জামায়াত-শিবিরের মামলায় অজ্ঞাত হিসেবে তাকে (আবু বক্কর) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ মামলার তথ্য প্রমাণ মুখ জবানি বলছেন বাদি পক্ষ।’ অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের কে, তা জানি না। তিনি আরও বলেন, যদি তিনি (আবু বক্কর) রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত না থাকে, তাহলে তাকে চার্জশীট থেকে বাদ দেওয়া হবে।’