Image description

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ-চিতোষী-মুদাফফরগঞ্জ সড়কটির রামগঞ্জ অংশের ৮ কিলোমিটার দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় সড়কের বেশির ভাগ স্থানেই কার্পেটিং উঠে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। এতে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সড়কটি। সড়কটির রামগঞ্জ অংশের পাশে রয়েছে তিনটি কলেজ, একটি আলিয়া মাদরাসা,একটি ফাজিল মাদ্রাসা ও হাই স্কুলসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়ন করছেন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী।

ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে চলাচল করছে রামগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নসহ পাশের চাঁদপুর জেলার শাহারাস্তি ও কুমিল্লা জেলার মুদাফফরগঞ্জ এলাকার হাজারও মানুষ। এতে যাত্রী ও পথচারীদের পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থেকে চিতোষী হয়ে কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার মুদাফফরগঞ্জ পর্যন্ত এই সড়কটির দৈর্ঘ্য ২৯ কিলোমিটার। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর অংশে পড়েছে ৮ কিলোমিটার। গত বিএনপি জোট সরকারের আমলে এ সড়কটির নির্মাণ কাজ করে লক্ষ্মীপুরের সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কিন্তু গত ১৭ বছরেও এই সড়কটিতে আর কোনো সংস্কার কাজ হয়নি। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সড়কটি এখন যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অথচ রামগঞ্জ উপজেলা শহরের সঙ্গে পাশের চাঁদপুর জেলার শাহারাস্তি ও কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার মুদাফফরগঞ্জের যোগাযোগের সবচেয়ে সহজ এ সড়কটি।

স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে রামগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নসহ পাশের চাঁদপুর জেলার শাহারাস্তি ও লাকসামের মুদাফফরগঞ্জে হাজারো মানুষ যাতায়াত করে। অথচ দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়া লক্ষ্মীপুর অংশের ৮ কিলোমিটার সড়কটির অধিকাংশ স্থান এখন পরিণত হয়েছে মরণফাঁদে। এতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। ফলে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

স্থানীয় বিএনপি নেতা মফিজুল ইসলাম বাবুল মোল্লা জানান, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় সড়কটি এখন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সড়কটির বেহাল দশার কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে করে রামগঞ্জ উপজেলা শহরে যেতেও আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

পানিয়ালা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামান বলেন, ‘এই রাস্তাটি খানাখন্দে একেবারেই খারাপ অবস্থা। স্কুলে আসা-যাওয়া করতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। সড়কটি খারাপ থাকার কারণে বাচ্চারাও ঠিকমতো স্কুলে আসতে পারে না। বর্ষাকালে দুর্ভোগের মাত্রা বাড়ে আরও কয়েকগুন। তাছাড়া এই সড়কের পাশে তিনটি কলেজ রয়েছে।’ কলেজের ছেলে-মেয়েদেরও যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। এমন বাস্তবতায় দ্রুত সড়কটি সংস্কারের দাবি জানান এই শিক্ষক।

রামগঞ্জ মডেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘সড়কটির এমন বেহালদশা পায়ে হেঁটে যেতেও সমস্যা পড়তে হয়। সব সময় ভয়ে থাকি, এই বুঝি গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আমাদের গায়ে ওঠে। রিকশায় চলাচলে এত ঝাঁকুনি হয়, পুরো শরীর ব্যথা হয়ে যায়। একদিন স্কুলে গেলে পরদিন আর যেতে মন চায় না।’

পানিয়ালা বাজারের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই সড়কের বেহাল দশার কারণে ব্যবসায়িক মালামাল এই সড়ক দিয়ে বর্তমানে পরিবহন করা সম্ভব হচ্ছে না তাই কয়েক কিলোমিটার ঘুরে কালিডাঙ্গা হয়ে অন্য রাস্তা  দিয়ে পানিয়ালা বাজারে মালামাল নিয়ে আসতে হয়। এতে পরিবহন খরচ বর্তমানে দ্বিগুণ দিতে হয়।

কেতুড়ি এলাকার বাসিন্দা আবদুল আল আমিন বলেন, ‘গত বিএনপি জোট সরকারের আমলে সড়কের কাজ করা হয়। এরপর গত ১৮  বছরেও আর কোনো সংস্কার কাজ হয়নি। এই সড়কের বেহাল দশার কারণে গত দুইদিন আগে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। 

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রামগঞ্জকে মনে হয় দেখার মতো যেন কেউ নেই।’ অথচয় এই রাস্তার রামগঞ্জ অংশ বাদ দিয়ে শাহারাস্তি, লাকসাম, চিতোষী, মুদাফফরগঞ্জ অংশটি প্রশস্তকরণসহ সড়কের কাজটি সম্পন্ন হয়েছে গত তিন বছর আগেই। এছাড়াও এই রাস্তার সাথে সংযুক্ত আরেকটি রাস্তা প্রশস্তকরণসহ পানিয়ালা-লোটরা হয়ে দোয়াভাঙ্গা ঢাকা রাস্তার সাথে সংযুক্ত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে লক্ষ্মীপুরের সড়ক ও জনপদ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আমির হোসেন বলেন, আগেও সড়কটি টেন্ডার হয়েছে তবে বিভিন্ন কারণে বাতিল হয়ে যায় বর্তমানে পুনরায় সড়কটি মেরামতের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। অনুমোদনের জন্য একটি প্রস্তাবনা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। কার্যাদেশ পেলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সড়কটির সংস্কার কাজ শুরু হবে।