
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সরকারের কাছে জুলাই হত্যা মামলাসহ গত ১৫ বছরে সংঘটিত হত্যা, নির্যাতন ও গুমের মামলাগুলোর বিচারকাজ নির্বাচনের পরেও অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি ও সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দাবি করেছেন। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে এসে তিনি এ দাবি জানান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে ট্রাইব্যুনালে হাজির হন নাহিদ। তবে অন্য একজন সাক্ষীর জেরা চলায় সময় স্বল্পতার কারণে তিনি সাক্ষ্য না দিয়ে ফিরে যান। ফেরার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “এই মামলার রায় হলে রাজনৈতিকভাবে ন্যায়বিচার পাব। তবে গত ১৫ বছরে সারাদেশে সংঘটিত গণহত্যা, নির্যাতন, নিপীড়ন ও গুমের মামলাগুলোর বিচার অব্যাহত রাখতে হবে। নির্বাচনের পরেও যেন বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত না হয়, সেই প্রতিশ্রুতি ও রোডম্যাপের দাবি জানিয়েছি সরকারের কাছে। রাজনৈতিক দলগুলোকেও এ বিষয়ে অঙ্গীকার করতে হবে।”
ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজে আমি সন্তুষ্ট। আশা করি, দ্রুত সময়ে ন্যায়বিচার পাব।”
মামলার আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে নাহিদ বলেন, “কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক জনমত তৈরি করে আসামিদের ফিরিয়ে আনতে হবে। রায়ের পর শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে শাস্তি দেওয়া যেকোনো সরকারের আইনি দায়িত্ব।”
এদিন ট্রাইব্যুনালে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে জেরা করেন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
এর আগে, গত ১০ জুলাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি ট্রাইব্যুনালে বলেন, “জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে আমাদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যার যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সত্য। আমি নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করছি। রাজসাক্ষী হয়ে এই অপরাধের বিস্তারিত তথ্য আদালতে তুলে ধরতে চাই এবং রহস্য উন্মোচনে সহায়তা করতে চাই।”
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন। আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেয়।
প্রসিকিউশন এই মামলায় তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ এনেছে। আনুষ্ঠানিক অভিযোগের পরিমাণ ৮,৭৪৭ পৃষ্ঠা। এর মধ্যে তথ্যসূত্র ২,০১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণ ৪,৫০৫ পৃষ্ঠা এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ ২,৭২৪ পৃষ্ঠার। মামলায় সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন ৮১ জন।
Comments