প্রকৌশলী ও যুবলীগ নেতার যোগসাজশে মাধবপুরে ৬০ লাখ টাকা লোপাট

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় সরকারি রাজস্বের ৬০ লাখ টাকারও বেশি আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি হেলাল মিয়া এবং সদ্য বদলি হওয়া তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলী শাহ আলমের বিরুদ্ধে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই দুর্নীতির ঘটনায় নিলামের নথি গায়েব করার অভিযোগও উঠেছে, যা তদন্তে জটিলতা সৃষ্টি করছে।
নিলামে অনিয়মের অভিযোগ
২০২৩ সালের ৩ জানুয়ারি হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের ২৯ নং স্মারকে সোনাই নদীর পাড় থেকে জব্দ প্রায় এক লাখ ঘনফুট সিলিকা বালি নিলামে বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) শাহ আলমকে আহ্বায়ক করে একটি নিলাম কমিটি গঠন করা হয়। নিলামে বালির স্তূপ তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়। এর মধ্যে মহব্বতপুর মৌজার দুটি অংশ মেসার্স শান্ত এন্টারপ্রাইজ এবং মেসার্স পারভেজ চৌধুরী নেন এবং তারা নির্ধারিত টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে ২০২৩ সালের ৯ মে কার্যাদেশ পান।
তবে, জিন্নত আলীর বাড়ি থেকে নিজাম উদ্দিনের বাড়ি পর্যন্ত ৮টি বালির স্তূপের নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে বুল্লা ইউনিয়নের বানেশ্বর গ্রামের মৃত এমদাদ আলীর ছেলে ও যুবলীগ নেতা হেলাল মিয়া নির্বাচিত হন। এই অংশের নিলাম মূল্য ছিল ৬৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, যার সঙ্গে ১৫% ভ্যাট ৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা এবং ১০% আয়কর ৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকাসহ মোট ৮৩ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার শর্ত ছিল।
আত্মসাতের অভিযোগ
অভিযোগ রয়েছে, হেলাল মিয়া নিয়ম অনুযায়ী পুরো টাকা জমা না দিয়ে মাত্র ২৩ লাখ টাকা জমা দেন। ২০২৩ সালের ১৩ মার্চ তিনি ট্রেজারি চালানে ১৩ লাখ টাকা এবং একটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা জমা দেন। বাকি ৬০ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা জমা না দিয়েই তিনি বালি উত্তোলন শুরু করেন। শুধু তাই নয়, নির্ধারিত সময়সীমা অমান্য করে দীর্ঘদিন ধরে বালি উত্তোলন ও বিক্রি করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
নথি গায়েবের অভিযোগ
এই আত্মসাতের প্রমাণ গোপন করতে নিলামের ফাইল গায়েব করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে এলজিইডি দপ্তর লিখিতভাবে জানায়, নিলামের নথি তাদের কাছে নেই। তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলী শাহ আলম দাবি করেন, তিনি দায়িত্ব ছাড়ার সময় সব কাগজপত্র অফিসে রেখে গেছেন। তবে যুবলীগ নেতা হেলাল মিয়া এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
দুদকের তদন্ত প্রক্রিয়া
হবিগঞ্জ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক এরশাদ আলী বলেন, “এই দুর্নীতির ঘটনা অত্যন্ত সুকৌশলে ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। আমরা তদন্ত শুরু করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি চেয়েছি।” এ বিষয়ে আরও তদন্তের জন্য মাধবপুরের বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ বিন কাসেমের কাছে গোপন নথি চাওয়া হয়েছে। তবে সংবাদ লেখা পর্যন্ত ইউএনওর পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়দের দাবি
স্থানীয়রা এ ঘটনায় দ্রুত তদন্ত করে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, এ ধরনের দুর্নীতি সরকারি রাজস্বের ক্ষতি করছে এবং এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
Comments