Image description

বগুড়ার শেরপুর টাউনক্লাব পাবলিক লাইব্রেরী মহিলা অনার্স কলেজের নতুন অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাকির হোসেনের নিয়োগকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। তার বিরুদ্ধে পূর্ববর্তী কর্মস্থলের কাগজপত্র জালিয়াতি, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির স্বাক্ষর জাল করা, শিক্ষকদের ভুয়া স্বাক্ষর ব্যবহার, এবং যথাযথ পদত্যাগ না করেই নতুন কলেজে যোগদানের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় শিক্ষা মহলে তোলপাড় চলছে।

গত ৩ মে অধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষার দিনই কলেজের গভর্নিং বডির দুই সদস্য, বিদ্যোৎসাহী সদস্য পিয়ার হোসেন পিয়ার এবং দাতা সদস্য জাহিদুর রহমান টুলু এই নিয়োগ নিয়ে আপত্তি তোলেন। তারা ৭ মে জেলা প্রশাসক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে গত ২১ আগস্ট বগুড়া জেলা শিক্ষা অফিসার মো. রমজান আলী আকন্দ তদন্ত শুরু করেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মোহাম্মদ জাকির হোসেন এর আগে সিরাজগঞ্জের সায়দাবাদের যমুনা ডিগ্রী কলেজের উপাধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি সেই পদ থেকে যথাযথভাবে পদত্যাগ না করেই শেরপুরের কলেজে অধ্যক্ষ পদে যোগ দিয়েছেন। এজন্য তিনি কয়েকটি ধাপে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, যমুনা ডিগ্রী কলেজের মুভমেন্ট রেজিস্টারে তিনি পারিবারিক কারণ দেখিয়ে গত ১৮ মে থেকে মাত্র তিন দিনের ছুটি নিয়েছিলেন। এরপর থেকে তিনি সেখানে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। তিনি যমুনা ডিগ্রী কলেজের সভাপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে একটি কাগজ দেখালেও, যমুনা ডিগ্রী কলেজের সভাপতি মো. শাহাদৎ হোসেন এই স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ এনেছেন। তিনি সরাসরি অস্বীকার করে বলেছেন, "জাকির সাহেব বিশ্বাসের অমর্যাদা করে আমার স্বাক্ষর জাল করেছেন।"

এছাড়াও, নতুন কলেজে যোগদানের জন্য পূর্ববর্তী কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের স্বাক্ষরসহ স্টাফ প্যাটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও, জাকির হোসেন সেই নথিতেও সকল শিক্ষক-কর্মচারীর স্বাক্ষর জাল করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। উপাধ্যক্ষ থাকাকালীন কলেজের মোবাইল ফোন, পাসওয়ার্ড, চেক বই, এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথিও তিনি বর্তমান কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেননি।

যমুনা ডিগ্রী কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আব্দুল আওয়াল জানিয়েছেন, জাকির হোসেনের দীর্ঘ অনুপস্থিতি এবং জালিয়াতির কারণে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) এর রাজশাহী আঞ্চলিক অফিসে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

এই সমস্ত অভিযোগকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন নতুন অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাকির হোসেন। তিনি বলেছেন, "আমি যথাযথ নিয়ম মেনেই আমার পূর্ববর্তী প্রতিষ্ঠান থেকে পদত্যাগ করেছি এবং নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেছি। একটি মহল আমার সম্মানহানি করার জন্য এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।"

শেরপুর টাউনক্লাব পাবলিক লাইব্রেরী মহিলা অনার্স কলেজের সভাপতি কেএম মাহবুবার রহমান হারেজ সাংবাদিকদের জানান, নিয়োগের সময় তারা সকল কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেই অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, "এখন যেহেতু তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে, তাই তদন্তের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"

বগুড়া জেলা শিক্ষা অফিসার মো. রমজান আলী আকন্দ জানান, তারা অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছেন এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন হাতে আসার পর সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।