সীতাকুন্ডে ভরা মৌসুমে সন্দ্বীপ চ্যানেলে মিলছে না ইলিশ, হতাশ জেলেরা

সামদ্রিক জলসীমায় মাছের সুষ্ঠু প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের ৬৫ দিন সকল প্রকার মৎস্য নৌযান দ্বারা মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এই সময়ের জন্য জেলেদের ৮০ কেজি করে দুই মাসে ১৬০ কেজি চাউল বিতরণ করা হয়। সারা বছর বিভিন্ন ধরনের মাছ ধরলেও এ সময় ইলিশ শিকার করেন না তাঁরা। কিন্তু ভরা মৌসুমে সাগরে ইলিশ না পেয়ে হতাশা নিয়ে ফিরতে হয়েছে জেলেরা। যে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়ে বোটের জ্বালানি খরচই মেটানো যাচ্ছে না জেলেরা। প্রতিবছর ইলিশ আহরণের পরিমাণ কমছে। কিন্তু মৎস্য বিভাগের হিসাবে দেশে প্রতি বছর ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে।
সরকারি হিসাব বলছে, বর্তমানে বছরে গড়ে ৬ লাখ টনের কাছাকাছি ইলিশ ধরা পড়ছে। কিন্তু ভর মৌসুমেও বাজারে ইলিশ কম। বিক্ষিপ্তভাবে জাটকা বিক্রি হলেও এই বর্ষায় ইলিশের আকাল চলছে। তা ভাবিয়ে তুলেছে সংশ্লিষ্টদের।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পুরনো কিছু মাছ বাজারে এলেও চলতি মৌসুমের মাছ এখনো বাজারে ওভাবে আসেনি। তাই ইলিশের দাম অস্বাভাবিক চড়া। মৎস্য বিভাগের যে হিসাব এতদিন ধরে চলে আসছে তার সাথে বাস্তবতার অনেক ক্ষেত্রে মিল নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, উৎপাদনে ইলিশ বিশ্বের শীর্ষস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বিশ্বের মোট ১১টি দেশে ইলিশ মাছ ধরা পড়ে। সবগুলো দেশ মিলে যা ইলিশ ধরে বাংলাদেশে তার অন্তত ৮৬ শতাংশ এককভাবে ধরা পড়ে। মৎস্য বিভাগের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত অর্থবছরে দেশে অন্তত ৬ লাখ টন ইলিশ ধরা পড়েছে। এবারও একইভাবে ইলিশ পাওয়া যাবে বলে আশা করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে বাজারে ইলিশ নেই। ভর মৌসুমেও বাজার ইলিশ শূন্য।
উপজেলার ভাটিয়ারী উত্তর বাজারে গিয়ে দেখা যায় বাজারে প্রচুর জাটকা বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে ৫ থেকে ৬টি মাছ ধরে, এই রকম ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫শ টাকা থেকে ৬শ টাকা। আর বড় সাইজের মাছের দাম প্রতি কেজি ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকা। বড় কিছু ইলিশও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। তবে দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরে জমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কুমিরা ইউনিয়ের কুমিরা জেলে পাড়া ঘাটে সারি সারি ইলিশ ধরার নৌকা ঘাটে ভিড়ছে। তবে ইলিশ না পেয়ে শুধু নৌকা আসছে ঘাটে। কয়েকজন জেলে জানান, জোয়ার সময় আমরা সাগরে দৈনিক চারবার মাছ আহরণ করতে যায়। মাছ না পাওয়ার কারনে এখন দৈনিক একবার মাছ আহরণ করতে সাগরে যায়।
জেলেরা বলেন, নোয়াখালী থেকে প্রতিবছর ইলিশের মৌসুমে ৫/৬ জন শ্রমিক নিয়ে আসেন এক এক জনের বেতন তিনবেলা খাওয়াসহ ২৫ হাজার টাকা। কিন্তু সাগরে তেমন মাছ না পাওয়ার কারণে তিনজনকে বিদায় করে দিয়েছেন।
তারা আরো বলেন, উপজেলায় ১৮টি জেলে পাড়া রয়েছে। এসব পাড়াতে বসবাসকারী শতকরা ৯০ ভাগ জেলের জীবন চলে সাগরে মাছ শিকার করে। এই মৌসমে ইলিশ শিকার ও বিক্রির টাকা গুলো দাতন পরিশোধ করে বাকি টাকা গুলো পুরো বছর সংসার চলে তাঁদের।
আজ শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় অমবস্যা শুরু হবে কিন্তু সাগরে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। বছরের এই অমবস্যা এই মাসে যে মাছ পাওয়া যায়, ইলিশ মৌসুমে এই ধরনের মাছ পাওয়া যায় না। মাছ না পাওয়ার কারনে জেলেরা ঘাটে সারি সারি ভাবে নৌকা বেঁধে রেখেছে।
উপজেলার বাড়বকুন্ড, বাঁশবাড়িয়া বোয়ালিয়াকূল, কুমিরা, ভাটিয়ারী ও সলিমপুর সাগর উপকূলীয় জেলে পাড়া ঘুরে জেলে পরিবার গুলোর মধ্যে চরম হতাশা দেখা গেছে।
কয়েকজন জলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্যবার ভরা মৌসুমে ছোট ইলিশ (২০০ গ্রাম) প্রতি কেজি বিক্রি হতো ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়। অথচ এবার সেই ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। ৫০০-৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১২শত টাকায়। ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকায়।
উপজেলার ফৌজদারহাট জেলে পাড়ার সদ্দার নির্মল দাশ বলেন, ভরা মৌসুমে জেলেরা সাগরে মাছ না পাওয়ার কারনে গত ১৮ আগস্ট ভোর রাতে নগরীর ফিশারি ঘাট আড়ত যাওয়ার পথে সিটি গেট এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা কাভার্ড ভ্যানের সঙ্গে দ্রুতগামী তাদের পিকআপের সংঘর্ষে পাঁচ মাছ ব্যবসায়ী নিহত হয়। তিনজনই সীতাকুন্ড উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের ফৌজারদার হাট জেলে পাড়ার ব্যবসায়ী।
সীতাকুন্ড উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মোতাছিম বিল্লাহ বলেন, এ বছর জেলেদের জালে আশানুরূপ ইলিশ ধরা পড়েনি। নদী দখল দূষণ, নাব্যতা সংকট, জাটকা নিধন, অবৈধ জালের ব্যবহারসহ নানা কারণে ইলিশের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ইলিশ ডিম পাড়তে নদীর মোহনায় চলে আসে, কিন্তু নদীতে দখনদূষণ, ডুবোচর ও বাঁধসেতু, মিলস কল কারখারা দূষিত পানি বিভিন্ন জায়গ্ দিয়ে সাগরে আসছে, সাগরে প্রচুর পলেতিং, জলবায়ুুর পরিবর্তনটা একটি ভয়ানক কারন হয়ে দাড়িয়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টি, হঠাৎ গরম, হঠাৎ ঠান্ডা, আমাদের বিভিন্ন গবেষণায় দেখাগেছ মাছ না পাওয়ার কারণ, সেটার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি সরকারী ভাবে সকল দপ্তর এক যুগে। বেশি সমস্য হলো দূষণসহ নানা অবকাঠামোর প্রভাবে বিচরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে ক্রমে হুমকির মুখে পড়ছে ইলিশের প্রজনন। ইনশাআল্লাহ আমরা এইটা কাটিয়ে উঠব।
Comments