ভুয়া এতিম দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ‘মোহাম্মদ আলী শিশু সদন’

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার চকপাড়া গ্রামে অবস্থিত ‘মোহাম্মদ আলী শিশু সদন’ নামের এতিমখানায় কোনো এতিম নেই, দরজায় ঝুলছে তালা, ঘর পরিত্যক্ত। অথচ সরকারি নথিতে এটি সক্রিয় এতিমখানা হিসেবে দেখানো হচ্ছে, এবং ভুয়া বিল-ভাউচারে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৫ অর্থবছরে ২০ জন এতিমের জন্য মাসিক ৪০ হাজার টাকা হারে মোট ১৩ লাখ ২০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছে এতিমখানার কমিটি। ২০২৫-২৬ অর্থবছরেও ভুয়া এতিম দেখিয়ে টাকা তুলতে গেলে বিষয়টি ফাঁস হয়, এবং বরাদ্দ স্থগিত করে উপজেলা সমাজসেবা অফিস।
স্থানীয়রা জানান, পাঁচ-ছয় বছর ধরে এতিমখানায় কোনো এতিম বা শিক্ষক নেই। কমিটির সভাপতি জহুরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল হালিম মাদ্রাসার ছাত্রদের এতিম হিসেবে দেখিয়ে টাকা তুলেছেন বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দা মতলেব বলেন, “৪-৫ বছর ধরে এখানে এতিম দেখিনি, তালা দেওয়া বন্ধ অবস্থায় আছে।”
আসাদুল ইসলাম নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, এখানে করোনার সময় থেকে কোন এতিম নাই। কিন্তু হালিম হুজুর তার মাদ্রাসার ছাত্র নিয়ে এসে ভিডিও করে সেই ভিডিও দেখিয়ে টাকাগুলো তোলে।
বাদুল্লি নামের আরেক বয়ঃজ্যোষ্ঠ বলেন, আমার বাড়ি এই জাগাতই। এহিনেই আমরা সবসময় বইসা থাকি। এহিনে যে এতিম ছলপল খাওয়াদাওয়া করে তা আমরা দেহি নাই। কয়েক বছর ধইরা এতিমখানা বন্ধ তালা দেওয়া।'
দুদু নামের স্থানীয় আরেক ব্যক্তি বলেন, ৩-৪ বছর হলো এখানে কোন এতিম নাই। এতিমখানা চলতেছেও না, সবকিছু বন্ধ আছে।
জয়নাল নামের এক ব্যক্তি বলেন, 'নিজেরাই কমিটি গঠন করেছে। মাইজবাড়ি পরিষদের পাশে অবস্থিত হালিমের মাদ্রাসা থেকে ছাত্র নিয়ে এসে ছবি তুলে সেই ছবি জমা দিয়ে কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক টাকা উত্তোলন করেছে। অথচ এতিমখানা বন্ধ অনেকদিন ধরে। কোন এতিম বা শিক্ষক কিছুই নাই।
এতিমখানা সংলগ্ন চকপাড়া দারুস সালাম কওমি মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ বলেন, পাঁচ ছয় বছর ধরে এতিমখানায় কোন এতিম নেই। আমাদের মাদ্রাসার কয়েকটা ছাত্র ছিল তাদেরকে এতিম দেখিয়ে যখন টাকা তোলে এতিমখানার কমিটির লোক তখন আমরা মাদ্রাসা বন্ধ করে দিয়েছি।
এতিমখানা কমিটির সভাপতি জহুরুল ইসলাম বলেন, এই মাদ্রাসায় আমরা জমি দিছি। টাকা তুলছি। বাকি আছিল সব পরিশোধ করছি। এতিমখানার জন্য মেলা কেনাকাটা করছি।' এতিমখানায় এতিম নেই তবুও টাকা তুলেছেন কেন জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি বলেন, আমাকে সময় দেন এতিম নিয়ে আইসা দিমু।
এতিমখানার সাধারণ সম্পাদক ও কুনকুনিয়া আল-ফালাহ নূরানিয়া হাফিজিয়া কওমি মাদ্রাসার মোহতামিম মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, ২০২১ সালের পরে আসলে এতিম নাই। এতিম ভর্তি আছে। আমাকে সময় দিলে সব হাজির করতে পারবো। আপনার মাদ্রাসার ছাত্রকে এতিম দেখিয়ে বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করেছেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন উত্তরই দেননি। বলেন,আমার কাছে সব কাগজপত্র আছে। ফয়সাল স্যার তদন্ত করতেছে, তার কাছে সব কাগজ জমা দিছি। তিনিই সব দেখবেন আপনারা দেখার কেউ না।
তদন্ত কমিটির প্রধান ফয়সাল আহমেদ বলেন, “এতিমখানা পরিত্যক্ত, কোনো এতিম পাইনি। সত্য প্রতিবেদন জমা দেব।” কাজিপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সোহেল রানা জানান, তিনি নিয়মিত পরিদর্শন করতে পারেননি। সিরাজগঞ্জ সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, “বিষয়টি দেখছি,” তবে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি।
Comments