Image description

মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া এলাকায় যমুনা নদীর বুকে গড়ে ওঠা একটি বিচ্ছিন্ন চর রক্ষায় মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দুপুরে মানববন্ধন করেছে স্থানীয় গ্রামবাসী। প্ল্যাকার্ড হাতে, চোখে ছলছল পানি নিয়ে বয়স্ক নারী-পুরুষ থেকে শুরু করে শিশুরাও দাঁড়িয়েছিল চরটি বাঁচানোর দাবিতে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তি অবৈধভাবে আবাদি জমিতে ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে। বিগত ১০ বছরে শত একর কৃষিজমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভিটেমাটি হারিয়েছেন শতাধিক পরিবার। বছরের পর বছর তারা বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু প্রতিদিনই ভারি হচ্ছে বঞ্চনার পাল্লা।

৭০ বছরের বৃদ্ধ আব্দুল হাকিম আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, এই চরটি শুধু কৃষি উৎপাদনের জন্য নয়, বরং বহু পরিবার প্রজন্ম ধরে এখানে বসবাস করছে। চরটি হারিয়ে গেলে তাদের জীবিকা, ইতিহাস ও সংস্কৃতি সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। এই চরেই আমার বাবার কবর, আমার শৈশবের স্মৃতি। ড্রেজারের শব্দ শুনলেই বুক কেঁপে ওঠে। মনে হয় সব কিছু নদীর গর্ভে চলে যাবে। চোখের সামনে প্রতিদিনই জমি হারিয়ে যেতে দেখেছি কিছুই করতে পারছি না। 

স্থানীয় কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, এই চরেই আমাদের ফসল হয়-ধান, গম, পাট, ডাল। ড্রেজিংয়ের কারণে জমি নদীতে চলে যাচ্ছে, আমরা কৃষি থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে এখন শ্রমিকের কাজ করতে হচ্ছে।

মানববন্ধনে বক্তারা জানান, অবৈধ ড্রেজিং বন্ধে প্রশাসনের কাছে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিতে গ্রামবাসীসহ গিয়েছি, কিন্তু কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো প্রভাবশালীরা রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাব খাটিয়ে ড্রেজিং কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় স্কুলশিক্ষক বেলাল হোসেন বলেন, প্রতিদিন রাতে ঘুম আসে না। নদীর দিকে তাকালে মনে হয় কাল সকালে হয়তো বাড়িঘর থাকবে না। সন্তানদের নিয়ে কোথায় যাব আমরা? সরকার যায় আর সরকার আসে আমাগো ভাগ্যের আর পরিবর্তন হয় না।

বক্তারা হুঁশিয়ারি দেন, অবিলম্বে অবৈধ ড্রেজিং বন্ধ ও দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে এলাকাবাসী ড্রেজার মেশিন গুলিয়ে দেবে। তার দায় প্রশাসনকে নিতে হবে। 

এসময় বাঘুটিয়া আলিম মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম, বাঘুটিয়া ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম ইসলাম, জয়নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাকসহ সহস্রাধিক নারী-পুরুষ উপস্থিত ছিলেন।