Image description

চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোডটি ‘আতঙ্কের রাস্তা’ হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। পাহাড় কাটার বিজ্ঞানসম্মত নিয়ম না মানা এবং পাহাড় ধস ঠেকানোর দৃশ্যমান পদক্ষেপের অভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা ও পাহাড় ধস। গত এক বছরে এই সড়কে ডজনখানেক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে, এবং বেশ কয়েকবার পাহাড় ধসের ঘটনায় রাস্তার একাংশ প্রায় এক মাস বন্ধ ছিল।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সড়ক নির্মাণে ১৬টি পাহাড় খাড়াভাবে কাটা হয়েছে, যা যেন একটি ‘মৃত্যুকূপ’ তৈরি করেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, সড়ক নির্মাণে পাহাড় কাটার ক্ষেত্রে কোনো বিজ্ঞানসম্মত নিয়ম মানা হয়নি। অনুমোদিত আড়াই লাখ ঘনফুট পাহাড় কাটার পরিবর্তে সিডিএ ১০ লাখ ৩০ হাজার ঘনফুট পাহাড় কেটেছে। ফলে বর্ষাকালে খাড়া পাহাড় থেকে মাটি ধসে রাস্তায় পড়ছে, যা সড়কটিকে চরম ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর এই অনিয়মের জন্য সিডিএ-কে ১০ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার ৫৫৩ টাকা এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডকে ৫ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। তবে, এই মামলাগুলো আপিল শুনানির মাধ্যমে এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। পরবর্তীতে ১৬টি পাহাড় ২২.৫ ডিগ্রি কোণে কাটার প্রস্তাব দিলেও পরিবেশ অধিদপ্তর তা নাকচ করে দেয়।

সিডিএর প্রকৌশলীরা জানান, সড়কটিকে নিরাপদ করতে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। পাহাড় রক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি কিছু এলাকায় রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের কাজ বাকি রয়েছে, যা শিগগির সম্পন্ন করা হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ চলছে।

প্রকল্পটি ১৯৯৭ সালে ৩৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে গৃহীত হয় এবং ১৯৯৯ সালে একনেকে পাস হয়। ২০০৪ সালে ৫৫ একর জমি অধিগ্রহণের পর কাজ শুরু হলেও নানা জটিলতায় তা বিলম্বিত হয়। পরে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে চার লেনের এই সড়ক নির্মাণ সম্পন্ন হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা ও যমুনা ব্যাংকের কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন টিটু বলেন, “জিইসি থেকে ফ্লাইওভার ধরে বায়েজিদ লিংক রোড হয়ে ফৌজদারহাটে মাত্র ১৫ মিনিটে পৌঁছানো যায়। এটি আমাদের জন্য খুবই সুবিধাজনক। তবে পাহাড় ধসের ঝুঁকি থাকায় উদ্বেগ রয়েছে।”

ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাসুদ রানা জানান, গত বছর পাহাড় ধসের কারণে সড়কের একাংশ বন্ধ ছিল, যার ফলে এক লেনে দ্বিমুখী যান চলাচলের সময় কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটে। তবে এসব ঘটনা নথিভুক্ত হয়নি। এ বছরও কিছু ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটেছে।

এই সড়কটি চট্টগ্রাম মহানগরীর যানজট কমাতে এবং কক্সবাজার, টেকনাফ, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানগামী যানবাহনের যোগাযোগ সহজ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।