মৎস্য বীজ খামার দখল করে ‘শহীদ মীর মুগ্ধ হল’ ঘোষণা খুবি শিক্ষার্থীদের

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থীরা গল্লামারীতে অবস্থিত সরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের কার্যালয় জোরপূর্বক দখল করে ‘শহীদ মীর মুগ্ধ হল’ ঘোষণা করেছে। রবিবার (১০ অগাস্ট) দুপুর ১২টার দিকে শতাধিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদি চত্বর থেকে মিছিল সহকারে খামারের কার্যালয়ে প্রবেশ করে এই ঘোষণা দেন। তারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১০ মিনিটের মধ্যে ভবন ত্যাগ করতে বাধ্য করে এবং অফিসে ‘শহীদ মীর মুগ্ধ হল’ লেখা ব্যানার টাঙিয়ে দেয়। এ সময় “দাবি নয়, অধিকার—মৎস্য ভবন দরকার” স্লোগান দিয়ে বিকেল ২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
মৎস্য খামারের ব্যবস্থাপক মো. মেহেদী হাসান জানান, প্রায় চারশ’ থেকে পাঁচশ’ শিক্ষার্থী জোরপূর্বক অফিসে প্রবেশ করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বের হয়ে যেতে বলে এবং বের না হলে জোর করে বের করে দেওয়ার হুমকি দেয়। বাধ্য হয়ে তারা অফিস ত্যাগ করেন। তিনি এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে অবহিত করেছেন।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান জানান, শিক্ষার্থীদের এই দখলের ঘটনা মৌখিক ও লিখিতভাবে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মৎস্য খামারে বর্তমানে ১৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পে আরও ১০ জনসহ মোট ২৬ জন কর্মরত রয়েছেন। তারা এখন অফিসের বাইরে অবস্থান করছেন। শিক্ষার্থীরা চারতলা বিশিষ্ট পুরো ভবনটি দখল করে নিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের দাবি, ১০ দশমিক ৩৫ একরের এই খামারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানার মধ্যে থাকায় আবাসন সংকট, গবেষণাগার সম্প্রসারণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করছে। ৭ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র পাঁচটি হল থাকায় ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থীই কেবল আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন। জীববিজ্ঞানভিত্তিক ডিসিপ্লিনগুলোর মাঠ গবেষণার জন্যও জমির অভাব তীব্র সমস্যা সৃষ্টি করছে। তবে এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা কথা বলতে রাজি হননি।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিমের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের নভেম্বরে শিক্ষার্থীরা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিবের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন এবং মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও শিক্ষা ও মৎস্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে জমি হস্তান্তরের অনুরোধ জানিয়েছিল। চলতি বছরের মার্চে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার দাবিটিকে যৌক্তিক উল্লেখ করে সমাধানের আশ্বাস দিলেও বিষয়টি এখনও ঝুলে রয়েছে। এই দখলের ঘটনা সরকারি সম্পত্তির উপর অবৈধ হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা আইন-শৃঙ্খলার জন্য উদ্বেগজনক।
Comments