Image description

সুনামগঞ্জের ছাতকে গত ৩ বছর যাবত মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা না থাকায়। এ পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা এজেএম রেজাউল আলম বিন আনছার। এই সুবাদে প্রশিক্ষণ ছাড়াই ভুয়া ভাউচার দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।

জানা যায় উপজেলা রিসোর্স পুলের মডিউল-১’ বিষয়ক এসবিসিসি প্রশিক্ষণের নামে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্বাস্থ্য সহকারীদের স্বাক্ষর জাল করে শুধু ছাতক উপজেলা থেকেই ২লক্ষ ১৬ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা এজেএম রেজাউল আলম বিন আনছার।

তার এই জাল জা‌লিয়া‌তির কথা স্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। একাধিক স্বাস্থ্য সহকারী পিআরএলে চলে গেলেও তাদের নামেও টাকা তোলেছেন তিনি। অথচ তারা কেউই পাননি এসব টাকা।

২০২৪ সালের ৬ ও ৭ নভেম্বর সুনামগঞ্জ জেলার ১২‌টি উপ‌জেলায় ৬শত ৪৮জন কর্মকতা কর্মচা‌রি‌দের দু‌দিনব‌্যা‌পী এস‌বি‌সি‌সি প্রশিক্ষ‌ন দেখালেও স্বাস্থ কর্মকর্তারা জানান কোনো উপজেলায়ই অনুষ্ঠিত হয়নি এ প্রশিক্ষণ। 

ছাতক উপ‌জেলায়ও প্রশিক্ষনের নামে ঘটেছে একই কান্ড। সম্প্রতি এ উপজেলায় প্রশিক্ষণের নামে একটি ভুয়া বিল-ভাউচার জাতীয় দৈনিক মানবকন্ঠ প‌ত্রিকার প্রতি‌নি‌ধির হাতে এসেছে। 

ভাউচারে দেখা যায় ২০২৪ সালের ৬ ও ৭ নভেম্বর একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক দেখানো হয়েছে ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলামকে। এতে তার সম্মানি ধরা হয়েছে ৭-হাজার টাকা। অতচ তিনি এ উপজেলায় যোগদান করেছেন ১১ নভেম্বর অর্থাৎ প্রশিক্ষণের ৪দিন পর। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুসরাত আরেফিনের সম্মানি দেখানো হয়েছে ৪ হাজার টাকা। কিন্তু তিনিও এ উপজেলায় যোগদান করেছেন ৩০ ডিসেম্বর অর্থাৎ প্রশিক্ষণ তারিখের ১-মাস ২৩দিন পর। ওই তারিখে প্রশিক্ষক ও আলোচক হিসেবে এজেএম রেজাউল আলম বিন আনছার নিজের সম্মানি ধরেছেন ১০ হাজার টাকা। একই অনুষ্টানের সঞ্চালক হিসেবে তিনি সম্মানি ধরেছেন আরো ৬ হাজার টাকা। 

উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. শহীদুল ইসলামের নামে ৫-হাজার টাকা। এছাড়া দুই দিনে মোট ১০৮জন স্বাস্থ্য সহকারীর নামে সম্মানি তোলা হয়েছে ২ লাখ,১৬ -হাজার টাকা। অথচ তারা কেউই জানেন না এ প্রশিক্ষণের বিষয়ে। শুধুমাত্র ছাতক উপজেলায়ই ভূয়া প্রশিক্ষণের নামে রেজাউল আলম হাতিয়ে নিয়েছেন ২ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা। একই পদ্ধতিতে জেলার ১২টি উপজেলায় প্রশিক্ষণ দেখিয়ে কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করে ২৫ লক্ষ টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ উটেছে এজেএম রেজাউল আলম এর বিরুদ্ধে। ভূয়া প্রশিক্ষণ দেখিয়ে জাল সাক্ষর আর ভূয়া বিলের মাধ্যমে সরকারী টাকা আত্মসাতের বিষয়ে জেলাঝুড়ে তুলকালাম সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে।

এ বিষয়ে এজেএম রেজাউল আলম বিন আনছার বলেন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রশিক্ষণে উপস্থিত সবাইকে সম্মানিও দেওয়া হয়েছে। তবে প্রশিক্ষ‌ন অনুষ্ঠানের কোন ছবি আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি অসুস্থ ব‌লে অপারগতা প্রকাশ করেন। প‌রে মোবাইল ফোনে জানান, তিনি এখন ঢাকায় আছেন, সুস্থ হয়ে অফিসে এসে সরাস‌রি কথা বল‌বেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুসরাত আরেফিন জানান, আমি ৩০ ডিসেম্বর ছাতকে যোগদান করেছি। ১ মাস ২৩দিন আগের কর্মশালায় কিভাবে যোগ দেব। এমন অভিযোগ অনেক স্বাস্থ্যকর্মী আমাকে জানিয়েছেন। তাদের নামেও সম্মানি বিল করা হয়েছে তারা কেউই তা পাননি। 

এ বিষয়ে ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম জানান এরখম কোনো প্রশিক্ষণে তিনি অংশ নেননি, তার স্বাক্ষর জাল করে টাকা তোলায় বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, আমি ২০২৪-সা‌লের ১১ ন‌ভেম্বর ছাত‌কে যোগদান ক‌রেছি। প্রশিক্ষন দেখানো হয়েছে এর ৪-৫ দিন আগে ৬ ও ৭ নভেম্বর তো আমি ছাতকে ছিলামই না।

সিলেট বিভাগীয় মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহিনা আক্তার বলেন, প্রত্যেক উপজেলায় এ রকম প্রশিক্ষণ হওয়ার কথা। কিন্তু সুনামগঞ্জের ছাতকে যে হয়নি তা আমি জানতাম না। এখন শুনলাম প্রশিক্ষণ না করে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এক অনুষ্ঠানে এক ব্যাক্তি সঞ্চালক ও প্রশিক্ষক হিসেবে আলাদা আলাদা সম্মানি নিতেও পারেন না। তা ছাড়া ইউএনও থেকে বেশি সম্মানি কোনো কর্মকর্তা পাবেন না, এটা অন্যায়।