Image description

বর্ষার আগমনে আমতলী খাল-বিল, নদী ও যেন নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। আর এই মৌসুমেই সবচেয়ে বেশি চাহিদা বেড়ে যায় ঐতিহ্যবাহী কাঠের নৌকার। এ সুযোগকে কেন্দ্র করে কুকুয়া ইউনিয়নের চুনাখালী নৌকা গ্রাম পুরোদমে চলছে নৌকা তৈরির ব্যস্ততা। এই শিল্প শুধু একটি পণ্য নয়, বরং এটি বহু পরিবারে জীবিকা নির্বাহের প্রধান অবলম্বন। বর্ষা মৌসুমে কাঠের নৌকা বিক্রি করে অনেক কারিগরই বছরের বড় অংশের আয় নিশ্চিত করে থাকেন।

চুনাখালী নৌকা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, এলাকায় নৌকা তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে। ঘরের পাশেই খোলা জায়গায় পলিথিন টানিয়ে, নৌকা তৈরির জন্য অস্থায়ী ঘর বানিয়েছেন। সেখানে কাজ করছেন কয়েকজন নৌকা বানানোর শ্রমিকরা। ছোট থেকে বড় সব বয়সী মানুষকেই নৌকা বানানোর কাজ করতে দেখা গেছে। কারও দম ছাড়ার উপায় নেই। তাদের কেউ কাঠ কাটছেন, কেউ নৌকায় পেরেক মারছেন। নৌকার ডাইসের মাধ্যমেই কাঠ কেটে নৌকার পাটাতন বানাচ্ছেন কেউ। কেউ বা কাঠ কাটার পর তা সমান করছেন ডাইসে বসাতে থাকে। পাখির ডাকে ঘুম ভাঙার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গ্রামবাসী হয়ে পড়েন কর্মব্যস্ত। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে কাঠের নৌকা তৈরি ও বেচা-কেনার ধুম পড়ে গ্রামটিতে।

বংশপরম্পরায় শত বছরের নৌকা তৈরির ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন এই গ্রামের কারিগররা। সযত্নে কাঠ কেটে, রাঙিয়ে ও জোড়া লাগিয়ে একেকটি নৌকা তৈরি করছেন তারা। পাশে সারি সারি নতুন নৌকা সাজানো, যেন এক শিল্পের প্রদর্শনী।
 
চুনাখালী গ্রামের নৌকা ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম (২৫) বলেন, বর্ষা আসলে আমাদের সময় কাটে নৌকা বানিয়ে। কৃষক, জেলে, এমনকি যাত্রী পরিবহনের জন্য অর্ডার পাই। বছরের এই সময়টা আমাদের জন্য রোজগারের প্রধান সুযোগ।
বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখাতে এই ব্যবসা নিয়েছি। এই গ্রামের প্রায় ৫০টি পরিবার নৌকা তৈরির সাথে জড়িত। ৫ জন কারিগর সপ্তাহে ৪ থেকে ৫টি নৌকা তৈরি করতে পারে। প্রতিটি ১০-১২ হাত নৌকা ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার মতো খরচ হয়, বিক্রি করা হয় ৫ হাজার টাকা মত। প্রতি মঙ্গলবার সাপ্তাহিক বাজার হিসেবে কলাপাড়া, মহিপুর, বাজারে এই নৌকা গুলো বিক্রি হয়। বরগুনায় বেতাগী পাথরঘাটা বামনা এদিক থেকে পাইকার এসে আমাদের এখান থেকে নৌকা নিয়ে যায়। প্রতি মাসে খরচ বাদে ৩০-৪০ হাজার টাকা উপার্জন হয়।

নূর জালাল, মবিন, রিয়াজুল, নৌকা কারিগর বলেন, দাম নির্ধারণ করা হয় তার আকার ও কাঠের মান অনুযায়ী। আমরা চুক্তিভিত্তিক কাজ করে থাকি। ৮ থেকে ৯ হাত নৌকা ৯০০ টাকা আর ১০ থেকে ১২ হাত নৌকা ১১০০ টাকা দেয় মহাজন।

কারিগরা বলেন, মহাজন আমাদের যে মজুরি দেন তা দিয়ে পরিবারের ব্যয়ভার বহন করা কষ্টসাধ্য। সরকার থেকে আমরা কোন সাহায্য পাই না।

২নং কুকুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন আহমেদ মাসুম তালুকদার বলেন, নৌকা কারিগড়দের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোন বরাদ্দ নেই, যদি কেউ অসুস্থ হয় তাহলে আমরা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাদেরকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান খানকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি তা রিসিভ করেন নাই।