
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। দীর্ঘদিন অসুস্থ স্ত্রী সোনাই বিবি (৭০) কে শাবল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছেন তার স্বামী করিম মুন্সী (৮০)। সোমবার (২৮ জুলাই) দিবাগত রাতে গোপালপুর ইউনিয়নের সরদার কান্দি গ্রামে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পরপরই পুলিশ করিম মুন্সীকে গ্রেফতার করেছে। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল মর্গে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, করিম মুন্সী ও সোনাই বিবি দম্পতির দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। তবে কয়েক বছর আগে এক ছেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান এবং কিছুদিন পরেই আরেক ছেলে ক্যান্সারে মারা গেলে করিম মুন্সী মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। সেই থেকে তার চিকিৎসাও চলছিল। অপরদিকে, নিহত সোনাই বিবিও দীর্ঘদিন ধরে নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন।
নিহতের পুত্রবধূ ময়না বেগম জানান, “রাত তিনটার দিকে শ্বশুর দরজায় ধাক্কা দিচ্ছিলেন। দরজা খুলে বসতে দিই। কিছুক্ষণ পর দেখি উনি ঘর থেকে বের হয়ে দৌড়াচ্ছেন। জিজ্ঞেস করলে বলেন, জামায় টাকা আছে, সেটা নিতে যাবেন। পরে আমি নিজেই ঘরে গিয়ে দেখি, শাশুড়ি নিথর হয়ে পড়ে আছেন, শরীর রক্তে ভেজা। চোখের সামনে যেন দুঃস্বপ্ন ভেঙে পড়ল।”
প্রতিবেশী মেহেদী হাসান মানবকন্ঠকে জানান "করিম মুন্সী আগে খুব ভালো মানুষ ছিলেন। দুই ছেলের মৃত্যু তাকে মানসিকভাবে গুঁড়িয়ে দেয়। গত কয়েক বছর ধরে তিনি প্রায়ই অস্বাভাবিক আচরণ করতেন।"
গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সবাই বলছে, দুই সন্তান হারানোর কষ্ট এক বৃদ্ধকে এমন চরম সিদ্ধান্তে ঠেলে দিল, এটা ভাবতেও গা শিউরে ওঠে।
এ বিষয়ে জাজিরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ মাইনুল ইসলাম বলেন, “ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযুক্ত করিম মুন্সীকে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। পারিবারিক ক্ষতি ও মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ চলছে।”
Comments