Image description

গাজীপুর মহানগরের ৩০ নং ওয়ার্ডের নীলেরপাড়া ও কানাইয়া এলাকায় বেওয়ারিশ কুকুরের আক্রমণে জনজীবন আতঙ্কিত ও বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে। গত ১৫-২০ দিনের মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ অন্তত ২৬ জন বাসিন্দা কুকুরের কামড়ে আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকে হাসপাতালে ভর্তি, কেউ কেউ রক্তাক্ত অবস্থায় চিকিৎসাধীন এবং অনেকেই জলাতঙ্ক প্রতিরোধী ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, দিনের বেলাতেই দলবেঁধে কুকুর চলাফেরা করছে। পথচারী, শিশু ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে দৌঁড়ে এসে কামড়ে দিচ্ছে। মসজিদগামী মুসল্লি, হাটবাজারে যাতায়াতকারী নারী, পুরুষ ও বৃদ্ধরাও রেহাই পাচ্ছেন না। আতঙ্কে অনেকেই প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।

৩০ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আলমাস বলেন, "আমার স্ত্রীকে হঠাৎ পেছন থেকে কুকুর কামড়ে দেয়। বেশ কয়েকটি সেলাই নিতে হয়েছে। আমরা ভয়ে রাতে বের হই না।"

নীলেরপাড়া এলাকার রঞ্জিতের দুই পায়ের মাংস ছিঁড়ে ফেলেছে কুকুর। নীলেরপাড়া ও কানাইয়া এলাকার আহতদের মধ্যে রয়েছেন মন্টুর ছেলে সজল, শাহাদাত হোসেন, গুলজার হোসেন ভূঁইয়া ও কামালের স্ত্রীসহ অন্তত ২৬ জন। এছাড়া ২৯ নং ওয়ার্ড সহ মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব বেড়ে গেছে।

স্থানীয়রা বারবার অভিযোগ জানালেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের ডাক্তার মোঃ রহমত আলী জানান, “বেওয়ারিশ কুকুর অপসারণের বিষয়ে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকায় আমরা সরাসরি কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছি না। তবে মানুষের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা চলছে।”

এদিকে শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক আমিনুল ইসলাম জানান, “গত এক মাসে আমাদের হাসপাতালে কুকুরে কামড়ানো রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ২২০। এর মধ্যে সরকারিভাবে ২,০০০ জনকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে, বাকিরা বাইরে থেকে সংগ্রহ করেছেন। হাসপাতালের আঙিনায় প্রতিদিন ৩৫টির বেশি কুকুর ঘোরাফেরা করছে, রোগী, স্বজন ও স্বাস্থ্যকর্মীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।”

তিনি আরও জানান, “সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতা না থাকায় এবং হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকায় হাসপাতাল চত্বরে থাকা কুকুরগুলোও অপসারণ করা যাচ্ছে না, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।”

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেওয়ারিশ কুকুর নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পিত 'নিউটারিং' (বন্ধ্যাত্বকরণ), টিকাদান এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। অন্যথায় জলাতঙ্কের মতো মারাত্মক রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

এ অবস্থায় এলাকাবাসী দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিটি কর্পোরেশন ও প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।