Image description

মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার পদ্মা নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায়। যুগে যুগে পদ্মার ভয়াল ভাঙনে নিঃস্ব হয়েছে শত সহস্র পরিবার। সেই পুরনো আতঙ্ক আবারও ফিরে এসেছে। শনিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে- সিংহেরহাটি ও বড় নওপাড়া এলাকায় নদীর পাড়ে বসবাসকারী মানুষজন ভাঙনের মুখে নিজেদের ঘরবাড়ি রক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

এছাড়াও টানা বৃষ্টির কারণে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নদীর পানি ও স্রোতের গতি। এর ফলে পদ্মার ভাঙন আগের তুলনায় আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। গত দুই দিন ধরে বৈরী আবহাওয়া, প্রবল স্রোত ও ঢেউয়ের আঘাতে অস্থায়ী প্রতিরক্ষা হিসেবে ব্যবহৃত জিও ব্যাগগুলো সরে গিয়ে মাটি ধসে পড়ছে, দেখা দিচ্ছে বড় বড় ফাটল।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বাঁধ নির্মাণকাজে ধীরগতির কারণে প্রায় কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। নদী থেকে বসতভিটার দূরত্ব এখন অনেক জায়গায় এক ফুটেরও কম। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে নদীপারের মানুষের মধ্যে। অনেক পরিবার ইতোমধ্যে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে, অনেকেই তাৎক্ষণিক শ্রমিক না পাওয়ায় অসহায় হয়ে পড়েছেন।

সিংহেরহাটি গ্রামের ফরিদ মিয়া জানান, তার বাবা জয়নাল দেওয়ানকে শুক্রবার দাফন করেছেন, আর আজ পরিবার নিয়ে নদীভাঙনের বিরুদ্ধে নিজেই প্রতিরোধ গড়তে নেমেছেন। 

বড় নওপাড়া গ্রামের শিমা আক্তার বলেন, জিও ব্যাগ সরে যাওয়ায় মাটি ভেঙে পড়ছে, রাতের মধ্যে বাড়ি নদীতে চলে যাবে কিনা-এ নিয়ে তারা উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নেছার উদ্দিন শনিবার সকালে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন এবং দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া থেকে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার দীঘিরপাড় পর্যন্ত ১৩.৭২ কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ী ও সতর্কতামূলক বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। প্রকল্পটির কাজ ২০২১ সালের অক্টোবরে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে সময় ও বাজেট উভয়ই বাড়ানো হয়েছে।  শুরুর সময় ৪৪৬ কোটি টাকার এই প্রকল্প বর্তমানে ৫২৭ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে এবং মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৪৮ শতাংশ। ফলে বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই বাঁধ নির্মাণ শেষ না হওয়ায় নদীপাড়ের বাসিন্দারা রয়েছেন চরম আতঙ্কে।

গত আড়াই দশকে লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার প্রায় ৪০টি গ্রাম পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়েছে। ভিটেমাটি, জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক পরিবার। কাজী বাবুল নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় প্রতিদিন আতঙ্ক নিয়ে রাত কাটাতে হয়। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ শেষ হলে অন্তত কিছুটা নিশ্চিন্তে থাকতে পারতাম।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী এনামুল হক জানান, প্রকল্পের কাজ নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এগিয়ে চলছে এবং ভাঙনপ্রবণ এলাকাগুলো নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। যেসব এলাকায় জিও ব্যাগ বা বাঁধে ভাঙন দেখা দিচ্ছে, সেখানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।