Image description

চট্টগ্রাম নগরীতে হঠাৎ করেই ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষ, পরস্পরবিরোধী মিছিল এবং বিষোদগারকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। মূলত চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজকেন্দ্রিক সাংগঠনিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এই দুই সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

ছাত্রদল নেতাদের অভিযোগ, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজে একক আধিপত্য ধরে রাখার জন্য ছাত্রদল নেতাকর্মীদের নানাভাবে হেনস্থা করছে। কয়েক দফা হামলাও হয়েছে নেতাকর্মীদের ওপর। এছাড়া আওয়ামী লীগের সময়ে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনে জড়িত চিহ্নিত সাবেক ছাত্রলীগ কর্মীদের এখন শেল্টার দিচ্ছে শিবির।

অন্যদিকে শিবির নেতারা অভিযোগ করছেন, ছাত্রদল অছাত্র ও বহিরাগতদের নিয়ে কলেজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিরোধ করছে। তাছাড়া এলাকায় চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় তারা শিবিরের বিরূদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় দেশের মানুষ যখন শোকার্ত ওই সময় ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষ আর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নগরীর চকবাজার এলাকা। রাত দশটা থেকে শুরু হয়ে ভোররাত পর্যন্ত চলে এই সংঘাত। এতে উভয়পক্ষেই আহত হয় বেশ কজন। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোমবার মহসিন কলেজ ছাত্রদল নেতাকর্মীরা আরিফ নামের এক ছাত্রকে ধরে নিয়ে চকবাজার থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। তাদের অভিযোগ, আরিফ ছাত্রলীগ কর্মী এবং আওয়ামী লীগ আমলে সে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত। এদিকে খবর পেয়ে শিবিরের নেতাকর্মীরা চকবাজার থানায় গিয়ে আরিফকে নিজেদের কর্মী দাবি করে পুলিশের কাছ থেকে নিয়ে আসে। এ সময় থানায় থাকা ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মী শিবির কর্মীদের হাতে আক্রান্ত হয়। এ খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিভিন্ন জায়গা থেকে ছাত্রদল কর্মীরা সেখানে ছুটে যায় এবং এ সময় শিবির কর্মীদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। 

এর জের ধরে গত দুই দিন ধরে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির চকবাজার এলাকায় পরস্পরের বিরুদ্ধে মিছিল সমাবেশ করে যাচ্ছে। বুধবার সকালে চট্টগ্রাম কলেজের গেটে সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যনারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনেও ছাত্রদলের বিরুদ্ধে কলেজে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারার অভিযোগ আনা হয়। এদিন বিকেলে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে চকবাজার অলি খাঁ মসজিদের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ছাত্রশিবির। ওই মিছিল থেকে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেওয়া হয়। আগের দিন মঙ্গলবার চকবাজার থানায় ছাত্রদলের উপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রদল। মিছিল শেষে সমাবেশ থেকে ছাত্রদল নেতারা শিবিরকে গুপ্ত সংগঠন আখ্যা দিয়ে দুই কলেজে নিরীহ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে রাখার অভিযোগ তুলেন। 

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা যেভাবে চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজকে জিম্মি করে রেখেছিল জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ছাত্রশিবির একই কায়দায় কলেজ দুটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। কলেজে ক্লাস করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় ছাত্রদল নেতাকর্মীরা তাদের হাতে হেনস্থা হচ্ছে। ছাত্রদল নেতাদের ওপর একাধিকবার হামলার ঘটনাও ঘটেছে।

তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্য পরিস্কার, আমরা কলেজে রাজনৈতিক সহাবস্থান চাই। কারণ চব্বিশের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে এভাবে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোন সংগঠনের হাতে জিম্মি হয়ে থাকতে পারে না। 

বুধবার বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর সভাপতি তানজীর হোসেন জুয়েল বলেন, ছাত্রদল মিছিল থেকে পতিত আওয়ামী লীগের ভাষায় শিবিরের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিয়েছে। তারা আমাদের কর্মীদের ওপর অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে গেছে। তারা চাঁদাবাজি করছে, আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে যাচ্ছে।

ছাত্রদলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা ছাত্র হয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যান, আপনাদের কেউ বাধা দেবে না। কিন্তু আমরা দেখেছি তারা মিছিল করে গিয়ে চট্টগ্রাম কলেজ গেটে লাথি মেরেছে। কোন ছাত্র এ কাজ করতে পারে না। এতে বোঝা গেছে ছাত্রদলের ব্যানারে এরা সন্ত্রাসী।