মামলার ভয় দেখিয়ে জামায়াত কর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগ

কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলায় বাবু মিয়া (৩৮) নামের এক পার্টস ব্যবসায়ীকে মামলার ভয় দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে আনিছুর রহমান নামের এক শ্রমিক নেতার বিরুদ্ধে।
আনিছুর রহমান পেশায় বদরপুর দাখিল মাদ্রাসার সহকারী সুপার এবং উপজেলা শিবিরের সাবেক সভাপতি ও জামায়াত কর্মী। জামায়াতে ইসলামীর সংযোগী সংগঠন শ্রমিক কল্যান ফেডারেশন এর রাজীবপুর উপজেলা শাখার সভাপতি।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী উপজেলা শহরে জামায়াতে ইসলামীর দলীয় কার্যালয় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় সম্প্রতি এক জামায়াত সমর্থক রাজীবপুর থানায় মামলা দায়ের করে। পুলিশ এ মামলায় বেশ কয়েকজন আ'লীগ নেতাকর্মীদের আটক করে।
সেই মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামী হিসেবে মানুষের সংখ্যা উল্লেখ করা আছে। সেই সুযোগকে ব্যবহার করে জামায়াত কর্মী আনিছুর রহমান পুলিশের নাম ব্যবহার করে ব্যবসায়ী বাবুকে মামলার ভয় দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে।
বাবু নিজেকে ওই ঘটনার সাথে তার কোন সংশ্লিষ্টতা নাই এবং কোন রাজনীতির দলের সাথেও সে জড়িত নয় জানালে তাকে পুলিশের ভয় দেখায় আনিছুর। এবং বলে টাকা না দিলে পুলিশ ধরে নিয়ে ওই মামলায় আটক দেখিয়ে জেলে পাঠাবে। নিজেকে সুরক্ষার স্বার্থে বাবু গোপনে তার সাথে আনিছুরের কথোপকথন এর অডিও ও ভিডিও ধারন করে। বারবার মামলার হুমকি দিয়ে টাকা চাইলে বাবু তার কাছে মুঠোফোনে রেকর্ডকৃত কথোপকথন ও ধারণকৃত ভিডিও সরবারহ করে স্থানীয় সাংবাদিকদের।
টাকা চাওয়ার ওই অডিও এবং ভিডিও ক্লিপ এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। ওই অডিও ক্লিপে জামায়াত কর্মী আনিছুর রহমান কে বলতে শোনা যায়, বাবু শোনো তোমার বিষয়ে আমাকে ফোন দিয়েছিল অফিসার, আমি বলছি ও আমার ছোট ভাই, আমি বিষয় টা দেখবো। আর আপনাদের বিষয়টাও আমি দেখবো। তুমি জরুরি আমার সাথে দেখা কর। তোমার যদি একটা পশমের (চুল) ক্ষতি হয় আমি রাজীবপুরে দ্বিতীয় দিন আর মুখ দেখাবো না।
গোপনে করা টাকা চাওয়ার ভিডিও ক্লিপটিতে দেখা যায় বাবু ও আনিছুর মোটরসাইকেল রাইড করছে। এসময় আনিছুর বাবুর কাছে ৫০ হাজার টাকা চাইছে মামলায় না জড়ানোর জন্য।
তিনি আরও বলেন, ২,৪,৬ মাসের মধ্যে জামিন পাবা না ঘর ভাঙা মামলায়। দুই দিনের জন্য হলেও জেলে থাকতে হবে। এতো কিছুর দরকার আছে? এখন তুমি কি করবা। আমি বলছি, ওসি আমাকে বলছে আপনি ওটা ম্যানেজ করেন, আমি বলছি কি করা লাগে করতেছি। ওসি বলছে যে আমাকে ৫০ হাজার টাকা দিবেন। মামলার তদন্তকারী পুলিশ অফিসার আর অফিসার আছে এদের ২-৪ হাজার টাকা আপনি দিয়েন। পরে বলছি সরি আমি পারবো না এতো বিগ এমাউন্ট, বাবু ছোট ব্যবসায়ী এবং আ'লীগ বা এর কোন সংগঠনের নেতাও না।
ভিডিওর এই কথোপকথন থেকে ধারণা করা যায় আনিছুর বাবুকে ভয় দেখিয়ে এবং পুলিশের কথা বলে টাকা দিতে বাবুকে হুমকি দিচ্ছে এবং ভিডিও গুলো পর্যালোচনা করে দেখে গেছে এগুলো আনিছুরের সাথে তার কথপোকথনের এবং তারা দুজন বাবু ও আনিছুর মোটরসাইকেল রাইড করছে।
ব্যবসায়ী বাবু সাংবাদিকদের বলেন, শত্রুতা মূলক ভাবে আমাকে আসামী করা হবে এমন ভয় দেখিয়ে, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) স্যারের কথা বলে আমার কাছে টাকা চাইছে আনিছ ভাই।
তিনি আরও বলেন, আমি একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অন্যের দোকানে কাজ করে কিছু টাকা জমিয়ে নিজে একটি দোকান নিয়েছি। সেই দোকানে শ্যালোমেশিন এর পার্টস বিক্রি করি। কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে আমার সম্পর্ক নেই, আমি কোনো রাজনীতির সাথে জড়িতও না।
জামায়াত অফিস আগুনে পোড়ানোর মামলায় আমাকে আসামি করার ভয় দেখিয়ে আনিছুর ভাই পুলিশের কথা বলে আমার কাছে টাকা চাচ্ছে। ভয় দেখিয়ে বলছে পুলিশ কে টাকা দিতে হবে তা না হলে তোর নামে মামলা হবে। ভয়ে ঠিকমতো ব্যবসা করতে পারছি না সবসময় আতঙ্কে থাকি।
ব্যবাসায়ী বাবুর কাছে ৫০ হাজার টাকা চাওয়ার বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হয় উপজেলা শ্রমিক কল্যাম ফেডারেশন এর সভাপতি আনিছুর রহমানের সাথে, অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমি এধরনের কোনো কিছু বাবুর কাছে দাবি করতে পারি না। আল্লাহর ওয়াস্তে আমি এধরনের দাবি করিও নাই। তিনি আরও বলেন, এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার কারণেই আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
পুলিশের নাম ব্যবহার করে ব্যবসায়ীর কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজীবপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) শরিফুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, আমি এবিষয়ে কোন কিছুই জানি না। আনিছের মাধ্যমে কারও কাছে টাকা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন ব্যবসায়ী বাবু যেন আমার কাছে আসে আমি তার সাথে কথা বলব। পুলিশের নাম ব্যবহার করে কেউ যদি টাকা চায় ভুক্তভোগীকে সরাসরি থানায় এসে লিখিত অভিযোগ দাখিল করার জন্য বলেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
Comments