ঘাতক কিলিং মুভি দেখে হত্যা করে রাঙ্গুনিয়ার সেই ব্যবসায়ীকে

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় উপজেলার রানীরহাট থেকে অপহৃত পোল্ট্রি ব্যবসায়ী মো. মামুন মাঝির (৩৮) অর্ধগলিত লাশ ৯ দিন পর পাহাড়ি ঝোপে মাটি চাপা অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সকালে রাঙ্গুনিয়ার সীমান্তবর্তী কাউখালী উপজেলার কমলপতি ইউনিয়নের নাইল্ল্যাছড়ির মাঝের পাড়া এলাকার পাহাড়ি ঝোপের মধ্যে মাটি চাপা অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত মামুন মাঝি রাঙ্গুনিয়ার সীমান্তবর্তী কাউখালী উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের সুগারমিল আদর্শগ্রামের মো. আলী আহম্মদের ছেলে। পেশায় একজন পোল্ট্রি ব্যবসা ও পাশাপাশি স্থানীয় একটি ইটভাটার মাঝি হিসেবে কাজ করেন।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ৭ জুলাই দুপুর আড়াইটার দিকে নিহত মামুন ঘর থেকে রানীরহাট বাজারের উদ্দেশ্যে বের হন। এরপর থেকে সে নিখোঁজ হয়। পরে রাত ৯টার দিকে মামুন তার স্ত্রীকে ফোন করে ২টি ব্যংক চেক রানীরহাট বাজারে পাঠাতে বলেন, এবং তিনি সকালে ফিরবেন বলে জানান। মামুনের পিতা আলী আহম্মদ চেক দুটি নিয়ে রাণীরহাট বাজারে গেলে মুখে মাস্ক পড়া আনোয়ার নামে এক যুবক এসে এগুলো নিয়ে যান। চেক দুটি ওই যুবককে দেয়ার আগে ছেলেকে ফোন দিলে বাবাকে মামুন বলেন, তাকে যেন মাফ করে দেন। এরপর থেকে মামুনের আর কোনো খবর পাওয়া নি।
পরদিন ৮ জুলাই মামুনের স্ত্রী সীমা আক্তার কাউখালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। একইদিন সন্ধ্যায় মামুনের মোবাইল থেকে ফোন করে তাঁর স্ত্রীর কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন ঘাতকেরা। মুক্তিপণ দাবির পর থেকে শুরু হয় সন্দেহের বেড়াজাল। খুঁজতে থাকে চেক নিতে আসা সেই আনোয়ারকে। পরে স্থানীয় জনতা রানীরহাট বাজার থেকে আনোয়ারকে আটক পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আনোয়ার জানায়, কামরুল রানীরহাট বাজারস্থ তার ভাড়া বাসায় চায়ের দাওয়াত দিয়ে মামুনকে নিয়ে গিয়েই চায়ের সাথে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে অপহরণ করেন। পরে আনোয়ারের এমন তথ্যের ভিত্তিতে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সোমবার রাতে লক্ষীপুর জেলা থেকে খুনী কামরুল ও স্ত্রী সাথী আক্তারকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে কামরুল জানায়, টিভিতে কিলিং মুভি দেখে ফিল্মি কায়দায় মামুনকে অপহরণ করার পরিকল্পনা করে। গত ৭ জুলাই রানীরহাট বাজারের নিজের ভাড়া বাসায় মামুনকে ডেকে নিয়ে চায়ের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে। এরপর শুরু হয় টাকা আদায়ের চেষ্টা। শেষে মামুনকে হত্যা করে মরদেহ বস্তাবন্দি করে কাউখালী উপজেলার মাঝেরপাড়া এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মাটি চাপা দিয়ে সে লক্ষ্মীপুর পালিয়ে যায়।
কাপ্তাই সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহেদুল ইসলাম বলেন, গতকাল রাতে অভিযুক্ত কামরুল ইসলামকে লক্ষ্মীপুর সদর থেকে আটক করা হয়েছে। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আজ সকালে মামুনের লাশ উদ্ধার করা হয়। মামুনকে ঘটনার দিন রাতে মামুনকে অজ্ঞান করার ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল। এরপর তাঁকে হত্যা করা হয়। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এবিষয়ে কাউখালী থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ঘাতক কামরুলকে আদালতে উপস্থাপন করে রিমান্ড চাওয়া হবে। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা, তা খুঁজে বের করা হবে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
Comments