মানিকগঞ্জে যুবদল নেতার মারধরের শিকার যুবক, শঙ্কায় ভুক্তভোগী পরিবার
মানিকগঞ্জে যুবদল নেতার হাতে মারধরের শিকার হয়ে হাসপাতালে সংকটাপন্ন সময় কাটাচ্ছে এক যুবক। এই ঘটনায় থানায় অভিযোগের তিন দিনেও আটক হয়নি অভিযুক্ত যুবদল নেতা। এতে করে শঙ্কায় ভুক্তভোগী পরিবার।
গত বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) দুপুরে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গিলন্ড বাজার এলাকায় এই মারধরের ঘটনা ঘটে।
আহত যুবক মেহেদী হাসান শুভ (২২) গিলন্ড এলাকার মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে। তিনি পেশায় একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। অভিযুক্ত ফরিদ উদ্দিন টিপু (৩৫) একই এলাকার মৃত মনো মিয়ার ছেলে। তিনি নবগ্রাম ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এবং পেশায় অ্যাম্বুলেন্স চালক।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ফরিদ উদ্দিন টিপু ও তার দলবল দীর্ঘ দিন যাবৎ গিলন্ড বাজার এলাকায় টং বানিয়ে নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন ও বিক্রি করে আসছিলেন। বিষয়টি গ্রামের লোকজন একাধিকবার নিষেধ করা সত্ত্বেও ফরিদ উদ্দিন টিপু গং তাদের নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন ও বিক্রয় বন্ধ না করে বরং তাদের এই কাজে বাধ সাধলে বিভিন্ন ভয় ভীতি প্রদর্শন করে। এর ফলে এলাকার লোকজন, যুব সমাজ মিলে টংটি সরিয়ে দেয়। এরপর টিপুগং ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং যুবকদের বিভিন্ন ভয় ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসে। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) মেহেদী হাসান শুভর ওপর অতর্কিত হামলা চালায় টিপু। গুরুতর রক্তাক্ত অবস্থায় আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
ভুক্তভোগীর মা মনোয়ারা বেগম (৫০) বলেন, বাপ মরা ছেলে আমার অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছি। আমার ছেলে কখনো কারো সাথে বিরোধে জড়ায় নাই। ছেলের কোন ভুল হয়ে থাকলে আমার ছেলেকে না মেরে আমায় বলতো আমি আমার ছেলেকে শাসন করতাম। আমার ছেলেকে যে অন্যায় ভাবে মারছে আমি তার বিচার চাই। এখনো পর্যন্ত পুলিশ তাকে ধরে নাই। আমরা গরীব মানুষ খুব ভয়ে আছি যদি আমাদের উপর হামলা চালায়।
এদিকে এই ঘটনায় গতকাল (৪ জুলাই) দুপুরে গিলন্ড বাজারে মানববন্ধন করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এলাকার সামগ্রিক লক্ষ্যে মাদকের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মারধরের শিকার হয়েছে শুভ। আমরা এই নেককাজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়া টিপু দিন-দিন বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে। তাতে কোনভাবেই এলাকার লোকজন শুধরাতে পারছে না। তার এই বেপরোয়া ভাব চলতে থাকলে এলাকার লোকজন শান্তিতে বসবাস করতে পারবে না। আমরা তার উপযুক্ত বিচার চাই।
মারধরের ঘটনা স্বীকার করে অভিযুক্ত ফরিদ উদ্দিন টিপু বলেন, আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনীতি করি। দীর্ঘ ১৭ বছর নানা ত্যাগ তিতিক্ষার শিকার হয়েছি। শুভ নামের ছেলেটা বেকার, সে এলাকার উঠতি বয়সী ছেলেদের মাদকের দিকে ধাবিত করছে। তাদের একটা গ্রুপ রয়েছে যারা অরাজকতার মাধ্যমে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতে চায়। এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদেরকে অনেক বার সতর্ক করা হয়েছে, সে থেকেই আমার সাথে তাদের শত্রুতা। আমাকে দেখলেই তারা বিভিন্ন সময় গালিগালাজ এবং মারধরের ফাঁকা হুমকি ধামকি দিত। আমি বয়সে বড় ওদের দিকে না তাকিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যেতাম। ঘটনার দিন শুভ নামের ছেলে বাজারের মধ্যে আমাকে মা-বাপ তুলে গালিগালাজ করেছে। আমি এর প্রতি উত্তর দিলে ও পাশের একটি দোকান থেকে হাতুড়ি উঠিয়ে আমাকে মারার চেষ্টা করে। পরে সেখানে ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে ওই হাতুড়ির আঘাতেই তার মাথা ফেটে যায়। শুভ যুব সমাজের জন্য হুমকি ওর আইনগত বিচার হওয়া জরুরী।
এ বিষয়ে জেলা যুবদলের সদস্য সচিব তুহিনুর রহমান তুহিন বলেন, আমরা ঘটনাটা পর্যবেক্ষণ করছি। ঘটনা তদন্ত করে সত্যতা যাচাইয়ের পর আমরা সত্যতা পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আমান উল্লাহ বলেন, মারধরের ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনা অনুসন্ধান করা হচ্ছে, আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে।
Comments