Image description

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা (আরডিও) মো. শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি খাদ্য গুদামে ধান সরবরাহে দপ্তরীয় ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। তিনি তার পদ ও প্রভাব ব্যবহার করে স্থানীয় দরিদ্র কৃষকদের প্রাপ্য সুযোগ কেড়ে নিয়ে নিজের ঘনিষ্ঠজনদের নামে ধান সরবরাহ করেছেন বলে জানা গেছে। 

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, আরডিও শফিকুল ইসলাম তার নিজ উপজেলা উল্লাপাড়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে ধান কিনে কর্মস্থল রায়গঞ্জ খাদ্য গুদামে সরবরাহ করেন। এতে সহযোগিতা করেন পল্লী উন্নয়ন অফিসের পরিদর্শক লুৎফর রহমান ও অফিস সহায়ক আবুল কালাম। তাদের পরিবারের সদস্যদের কৃষি কার্ড ব্যবহার করে সরকারি খাদ্য গুদামে ২৪৯ মন ধান বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। 

ধান পরিবহন মালিকের সন্ধান করে জানা যায়, পরিবহনের মালিকদের বাড়ি উপজেলার সলঙ্গা থানার আশে পাশে। 

খাদ্য গুদাম সূত্রে জানা গেছে, ওই ধানগুলো সরবরাহ করতে ব্যবহার করা হয়েছে লুৎফর রহমানের পিতা সিরাজুল ইসলাম, চাচাতো ভাই মুজাম এবং অফিস সহায়ক আবুল কালামের ভাই আসাদুল ইসলামের নাম। 

উপজেলার বুলাকীপুর গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলামের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা কেউ বিক্রয়কৃত ধানের দাম জানিনা, কোন টাকা পয়সাও পাইনি। তবে শুনেছি লুৎফরের কাছে টাকাগুলো আছে। একই গ্রামের মুজাম হোসেন জানান, ধান বিক্রির জন্য অনলাইনে কোন আবেদন করতে হয়নি। তারা শুধু একদিন চান্দাইকোনা ব্যাংকে গিয়ে স্বাক্ষর দিয়েছেন। অন্য কোনো অফিসে যেতে হয়নি। 

পল্লী উন্নয়ন অফিসের অফিস সহায়ক আবুল কালাম বলেন, আমার ভাই আসাদুল খাদ্য গুদামে ধান দিবে বলে জানিয়েছিল। পরে আমি স্যারকে বলেছিলাম। পরবর্তীতে আমার ভাই কি করেছে আমি বলতে পারবো না। এবিষয়ে আসাদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

স্থানীয় কৃষকেরা বলেন, প্রকৃত কৃষকরা দীর্ঘদিন যাবৎ অনলাইনে আবেদন করেও খাদ্য গুদামে ধান সরবরাহ করতে পারেননি। অথচ কোনো আবেদন ছাড়াই, বাইরের লোকজনের নামে ধান ঢুকছে সরকারি গুদামে। এঘটনায় তারা তীব্র নিন্দা জানিয়ে ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা চান তারা। 

ওই অফিসের এক স্টাফ (নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন) স্যারের নির্দেশেই নির্দিষ্ট কিছু লোকের কাছ থেকে ধান নিয়ে গুদামে ঢোকানো হয়েছে। এতে করে প্রকৃত কৃষকরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। 

বিষয়টি নিয়ে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, আমার অফিসের দুই কর্মচারী তাদের পরিবারের ধান বিক্রি করতে চেয়েছিল। শুধু তাদের অনুরোধে আমি গুদাম কর্তৃপক্ষকে ফোনে জানিয়ে দিয়েছিলাম। তবে আমি নিজে কোনো ধান বিক্রি করিনি। কিন্তু পরবর্তীতে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আপনারা যা পারেন করেন। 

উপজেলার চান্দাইকোনা এলএসডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম জানান, তারা অফিসার মানুষ। তাদের মানের কখনো ক্ষুন্ন করবেন না। ওরা উপর লেভেলের লোক তাদের উপরেই রাখবেন। ওরা বড় অফিসার আমরা ছোট অফিসার ভাই। 

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. সিরাজুল হক সরকার জানান, এ বিষয়ে আমার জানা নাই। তবে আপনারা খাদ্য গুদামে যোগাযোগ করতে পারেন। 

রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা অভিযোগগুলো গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছি। যথাযথ প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সচেতন মহল বলছে, একজন দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা যদি নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে দরিদ্র কৃষকদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেন, তাহলে এটি শুধু প্রশাসনিক নয় নৈতিকতাকেও লঙ্ঘন করে। তাই দ্রুত এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।