শ্রীমঙ্গলে চা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের ১ম সম্মেলন অনুষ্ঠিত

ভূমি অধিকারসহ ১০ দফা দাবিতে চা-শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের ১ম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন, সমাবেশ, র্যালি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৯ জুন (রোববার) সকালে শ্রীমঙ্গলের জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
উদ্বোধনী পর্বে চা শ্রমিক কেন্দ্রের সংগঠক মনীষা ওয়াহিদের সঞ্চালনায় উদ্বোধন ঘোষণা করেন বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
এসময় তিনি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন চা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আহবায়ক সবুজ তাঁতি।
এর আগে সকাল ১০ টায় সম্মেলনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। চা-জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতি, সংগীত, আবৃত্তি ও নাটকের মধ্য দিয়ে তারা তাদের বঞ্চনার ইতিহাস ও প্রতিরোধের চেতনা তুলে ধরেন। বিশেষ করে ঐতিহাসিক “মুল্লুক চলো” আন্দোলন নিয়ে পরিবেশিত নাটকটি দর্শকদের আবেগাপ্লুত করে তোলে।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর একটি র্যালী শহরে প্রদক্ষীন করে। ব্যানার, ফেস্টুন, স্লোগানে মুখরিত এই র্যালিতে হাজার হাজার চা-শ্রমিক অংশ নেন। এতে শ্রীমঙ্গলসহ সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ সহশ্রাধিক চা-বাগানের শ্রমিক, শিক্ষার্থী ও যুবক এতে অংশ নেন।
উদ্বোধকের বক্তব্যে কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশে সবথেকে নিপীড়িত, বঞ্চিত অবহেলিত চা-জনগোষ্ঠী, দীর্ঘদিনের লড়াই সংগ্রামে তাদের অধিকার বাস্তবায়ন হয়নি। কমরেড সেলিম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে বলেন এরশাদের আমলে আমরা আন্দোলন করে অধিকার আদায় করেছি, কিন্তু আপনি চা জনগোষ্ঠীর ভূমির অধিকার দিতে আপনার সমস্যা কি, বাগানের বাইরেও অনেক জায়গা আছে যেগুলো তাদের দেওয়া যায় একই সাথে ৬০০ টাকা মজুরি সহ ১০ দফা বাস্তবায়ন করারও আহবান জানান তিনি।
সম্মেলনের পরবর্তী পর্বের আলোচনায় সবুজ তাতীর সভাপতিত্ব, এস এম শুভ'র সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, সিপিবি সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, শাবিপ্রবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজিয়া চৌধুরী, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতা জলি তালুকদার, মাহবুব আলম সহ বিভিন্ন চা বাগানের পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দ ও চা শ্রমিক প্রতিনিধিগণ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, “১৮৫ বছরের বঞ্চনা আর চলবে না। ভূমির অধিকার ও দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরি সহ ১০ দফা দাবি এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।”তাঁরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে চা-শ্রমিকদের ১০ দফা দাবি অন্তর্ভুক্ত করার জোর দাবি জানান।
এ সময় বক্তারা আরও বলেন, “চা-শ্রমিকের সন্তান যেন আর কুঁড়েঘরে বড় না হয়, যেন শিক্ষার আলো ছুঁয়ে যায় প্রতিটি পরিবার, সেই স্বপ্ন নিয়েই আজকের সম্মেলন।” আজকের এই সম্মেলন এক সংগ্রামের সূচনা, যা রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে চা-শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে সামনে এগিয়ে নেবে।
Comments