Image description

বরগুনার বেতাগীতে ধর্ম বদলে বিয়ে করেও রক্ষা হলোনা এক প্রেমিক যুগল তরুণ-তরুণীর। পরিবারের টানা -হেচড়ায় গ্যাড়াকলে পড়ে তারা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। গড়িয়েছে অপহরণ মামলায়।

জানা গেছে, উপজেলার কাজিরাবাদ ইউনিয়নের কুমড়াখালী গ্রামে হিন্দু ধর্মাবলম্বী দীপা রায় নামে এক তরুণী স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলিম ছেলেকে বিবাহ করেছেন। দীপার নতুন নাম রাখা হয়েছে আয়শা আক্তার। ঘটনাটি ঘটেছে দেশের উপকূলীয় জনপদ বেতাগী উপজেলার কাজিরাবাদ ইউনিয়নের কুমড়াখালী গ্রামে। অবশেষে এ নিয়ে দীপা রায়ের বাবা বাদী হয়ে বেতাগী থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন।

সরজমিনে স্থানীয়রা জানায়, তরুণী দীপা রায় দীর্ঘদিন যাবত একই এলাকার বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান করিমের পুত্র মো. আবু সালেহ মুছার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। দীপার বাবার সহচর হিসাবে ঘন ঘন তাদের বাড়ীতে আসা-যাওয়ার সুবাধে এ সম্পর্ক তৈরি হয়। এই তরুণী প্রেমে মজে পূর্ব পুরুষের ধর্ম ছেড়ে পাড়ি দেন প্রেমের ডাকে সাড়া দিতে। প্রেমিক অন্য ধর্মের ও বেকার। তাই সম্পর্ক মেনে নিতে নারাজ মেয়ের বাবা-মা। সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কোন ভাবেই বিয়ে দিবেন না অন্য ধর্মালম্বী ছেলের সঙ্গে। এরপর সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে এই যুগল পরিকল্পনা করে ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করার। সেখানে আর কোনো বাধা থাকবে না। বাবা-মা সফল হতে না দিলেও প্রেমকে পরিণতিতে নিয়ে গেছে এই যুগল।
 
তাদের এই সম্পর্ক দীপা রায়ের বাবা স্বদেশ কুমার রায় সুব্রত মেনে না নেয়ায় তারা গত ২১ জুন শুক্রবার বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। একই দিন ঢাকার প্রথম শ্রেণির ম্যাজিষ্ট্রেট/নোটারী পাবলিকের কার্যালয়ে হলফনামার মাধ্যমে দীপা রায় স্বেচ্ছায় হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং মো. আবু সালেহ মুছার সাথে শরিয়ত মোতাবেক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে দীপা রায়ের নতুন নাম রাখা হয় আয়শা আক্তার। হলফনামায় মোসা. আয়েশা আক্তার ওরফে দীপা রায় উল্লেখ করেন, আমি প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় স্বেচ্ছায় হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা উভয় উভয়কেই গভীরভাবে ভালবেসে আসছি। এই ভালবাসাকে চিরস্থায়ী রূপ দেয়ার জন্য বিবাহ বন্ধনে আবব্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। বিয়ের খবরটি ছড়িয়ে পরলে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। স্থানীয়ভাবে টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়।

এদিকে দীপা রায়ের বাবা স্বদেশ কুমার রায় সুব্রত বাদী হয়ে ওই দিন (গত ২১ জুন) বেতাগী থানায় মো. আবু সালেহ মুছা, তার বাবা মাহবুবুর রহমান করিম, প্রতিবেশি প্রভাষক মিজানুর রহমান সহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৫-৭ জনের নামে অপহরণ মামলা দায়ের করেন।

মোসা. আয়েশা আক্তার ওরফে দীপা  বলেন, ‘আমি স্বেচ্ছায় আবু সালেহ মুছা সাথে বাসা থেকে চলে আসছি। আমি কোর্টের মাধ্যমে আমার হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে শরীয়ত মোতাবেক আবু সালেহ মুছার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি। আমার নাম এখন থেকে মোসা. আয়েশা আক্তার। আমার বাবা আমার স্বামীর নামে অপহরণের মিথ্যা মামলা করেছেন। আমাকে কেউ অপহরণ করেনি।

অবশ্য আয়েশা আক্তার ওরফে দীপার বাবা স্বদেশ কুমার রায় সুব্রত বলেন, বিয়ে এবং ধর্মান্তরের এফিডেভিটের আইনগত কোন বৈধতা নেই কারন আমার মেয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক। এফিডেভিটে যে স্বাক্ষর রয়েছে তা আমার মেয়ের নয়। আমার মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে আবু সালেহ মুছার বাবা মাহবুবুর রহমান করিম বলেন, এ মামলার কোন ভিত্তি নেই। দীপা রায় ধর্মান্তরিত হয়ে আমার ছেলের সাথে স্বেচ্ছায় ও স্বজ্ঞানে বিয়ে করেন। তাই আমাকে অযথা হয়রাণি করার উদ্দেশ্যে অপহরণের মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। ভালবেসে বিয়ে করাটা আমাদের সমাজে নতুন বিষয়  ও কোন অন্যায় নয়? দুটি প্রাণের মাঝে প্রেম-পরিণয় ঘটছে এমন ঘটনা অহরহই। তাছাড়াও মুসলিম রীতি অনুযায়ী ধর্মীয় বিধি-বিধান মেনে যেহেতু বিয়ে হয়েছে। সেখানে আইনের কোন ব্যতয় হয়নি।

এ বিষয় বেতাগী থানার অফিসার ইনচার্জ মো: মনিরুজ্জামান বলেন, অপহৃতকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

উপজেলার বুড়ামজুমদার ইউনিয়নের বাসিন্দা পুরোহিত উত্তম চক্রবর্ত্তী বলেন, ‘প্রবাদ আছে প্রেম মানে না কোনো জাতি, ধর্ম, বর্ণ বা সামাজিক ভেদাভেদ। এটি একটি মানবিক অনুভূতি যা যে কারো প্রতি যেকোনো সময় সৃষ্টি হতে পারে। এখানে তাই ঘটেছে। ভালোবাসা সর্বজনীন এবং অসীম প্রকৃতির সেই ইতিহাসই রচিত হয়েছে।