
সংবাদ প্রকাশের জেরে ঝালকাঠির নলছিটিতে খান মাইনউদ্দিন (৪০) নামে স্থানীয় এক সাংবাদিকের মাথায় কুপিয়ে অচেতন করার পরে ওই সাংবাদিকের মা ও স্ত্রীকেও বেধড়ক মারধর করেছে সন্ত্রাসীরা। অচেতন অবস্থায়ই সাংবাদিককে পিটিয়ে বাম হাতটিও ভেঙে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের জুরকাঠি গ্রামে মাইনউদ্দিনের নিজ বাড়িতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভর্তি করা হয়েছে তার মা ও স্ত্রীকে।
সাংবাদিক খান মাইনউদ্দিন দৈনিক বাংলাদেশ বুলেটিন পত্রিকার বরিশাল ব্যুরো প্রধান ও আঞ্চলিক দৈনিক দখিনের কণ্ঠ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত আছেন।
মাইনউদ্দিনের ভাগিনা শাকিল খান জানান, মঙ্গলবার দুপুরে নলছিটির দপদপিয়া ইউনিয়নের উত্তর জুরকাঠি গ্রামের সরকারি অর্থায়নে নির্মিত একটি কালভার্ট কাঠের গেট বানিয়ে বন্ধ করে রাখার ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ করেন সাংবাদিক খান মাইনউদ্দিন। সংবাদ প্রকাশের পর ওই এলাকার আবু হোসেন হাওলাদার (আবু ড্রাইভার), তার ছেলে ইমরান হাওলাদার, রিয়াজ হাওলাদার, মুসা হাওলাদারের ছেলে ইব্রাহিম হাওলাদার, হাবিব সিকদারের ছেলে নিশাত সিকদার, আলম হাওলাদার, সানি হাওলাদারসহ ১০/১২ জন লোক রামদা, চাপাতি, ছুরি, লোহার রড, হাতুড়ি নিয়ে সাংবাদিক খান মাইনউদ্দিনের বাড়িতে ঢুকে তার ওপর হামলা চালান।
প্রথম কোপটিতে তার ডান কপাল ও চোখের মধ্যবর্তী জায়গা থেকে প্রায় এক ইঞ্চি ক্ষত হয়ে মাংস বেড়িয়ে যায়। এরপর অচেতন হয়ে পড়লে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে তার বাম হাত ভেঙে ফেলে সন্ত্রাসীরা। বাঁচাতে গেলে লাঠির আঘাত থেকে রেহাই পাননি স্ত্রী তানজিলা আক্তার ও মা লিলি বেগম। মা লিলি বেগমের হাতের তিনটি আঙুল ভেঙে গেছে এবং স্ত্রীর বাম হাঁটুসহ সারা শরীরে ব্যথা ও ফোলার চিহ্ন রয়েছে।
পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানীয়রা মাইনউদ্দিন ও তার পরিবারকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
শাকিল আরও জানান, আমরা আজ ডাক্তারের সঙ্গে সব রিপোর্ট নিয়ে কথা বলবো। ডাক্তার বললে রাতের মধ্যেই ঢাকা নিয়ে যাবো। মামার আজ সকালে জ্ঞান ফিরলেও চোখ মেলতে পারছেন না কিংবা কোনো কথাও বলছেন না। তিনি এখনও আশঙ্কাজনক অবস্থায়। মামি আর নানিও এখানে ভর্তি আছে।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন আজকের মধ্যেই আবু ড্রাইভার ও তার ছেলে ইমরানকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা চেষ্টা মামলা করা হবে।
এ ব্যাপারে আবু হোসেন হাওলাদার (আবু ড্রাইভার) জানান, আমরা হামলা চালিয়েছি এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাদের পরিবারের একটি বিয়েতে ওদের দাওয়াত দেইনি এটাই অপরাধ। ঘটনার আগে ওর মা, বোন এবং স্ত্রী হাতে দা নিয়ে আমাদের হুমকি দেয়। আমরাও এগিয়ে গেলে ওদের দায়ের আঘাত আমার গায়েও লাগে এবং ধস্তাধস্তিতে মাইনউদ্দিনের কপালেও বেশিটা লাগে।
"আমিই ওকে বরিশাল হাসপাতালে নিয়ে যাই। তবুও ওর ভাই গিয়াস হাসপাতালেই আমার গায়ে হাত তোলে এবং মোটরসাইকেলে উঠিয়ে আমাকে মারার জন্য নিয়ে যায়। কোনোমতে বেঁচে ফিরেছি। এলাকায় খোঁজ নিলে দেখবেন ওদের কথা কেউ ভালো বলবে না"।
নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম বলেন, একজন সাংবাদিকের ওপর হামলা হয়েছে শুনেছি। এখনও কেউ থানায় অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Comments