Image description

নীলফামারীর সৈয়দপুরে ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইন জুয়ার দৌরাত্ম্য। অল্প সময়ে বিপুল টাকার মালিক হওয়ার নেষায় বুদ এখানকার শহর গ্রামের শত শত তরুণেরা। আর তাঁদের খপ্পড়ে পড়ে নি:স্ব হচ্ছেন শত শত প্রবাসী, হারাচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।

থাই, কালিয়ান, কেসিনো নামে এসব অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে চলে অনলাইন জুয়ার আসর। শহর ছাপিয়ে এই জুয়ার ব্যবহার চলে গেছে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত। পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে কিশোর-তরুণদের অনলাইন জুয়ার এইসব সাইটে বুঁদ থাকতে দেখা যায়। সচেতন মহল ও অভিভাবকরা বলছেন, উঠতি বয়সী ছেলেদের সারা দিন মোবাইল নিয়ে একসঙ্গে বসে থাকতে দেখা যায়। শুরুর দিকে বিষয়টি স্বাভাবিক মনে হলেও পরে জানা যায় তারা মোবাইলের মাধ্যমে বেটিং (ভার্চ্যুয়াল জুয়া) করছে। জুয়া খেলে অনেকে এখন বিশাল টাকার মালিক। করেছেন বাড়ি গাড়ি আর নিয়েছেন বিশাল জমিজমা।

আবার এই জুয়ার টাকা পেয়ে অনেক তরুণ মাদকসেবনসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য। তবে পুলিশ জানিয়েছে, জুয়ার বিস্তার রোধে তাদের নিয়মিত অভিযান চলমান আছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম ইউনিয়ন, খাতা মধুপুর ইউনিয়ন, বোতলাগাড়ী, কামারপুকুর, বাঙ্গালিপুর ইউনিয়নসহ শহরের কাজীপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, হাতিখানা, মুন্সিপাড়া, সহ উপজেলার গ্রামীণ জনপদ প্রত্যন্ত এলাকায় জুয়ার প্রসার ঘটেছে। 

এসব তরুণরা ফেসবুক-ইউটিউবের মাধ্যমে এসব সাইটের বিজ্ঞাপন প্রচারে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এসব জুয়ার মাধ্যমে লেনদেন হয় কোটি কোটি টাকা। নগদ টাকার আধিক্য থাকায় অনেক তরুণ মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েন। এ ছাড়া ভার্চ্যুয়াল এই জুয়াকে কেন্দ্র করে শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠেছে একাধিক কিশোর গ্যাং; তারা জুয়ার টাকা জোগাড় করতে জড়িয়ে পড়ছে মাদক বেচাকেনাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সঙ্গে। দলবল নিয়ে দাপটের সাথে চলে তাঁদের মোটরসাইকেল মহড়া।

অনলাইন (থাই) জুয়ায় আসক্ত শহরের হাতিখানার মো. নাসিম (ছদ্মনাম) জানান, যারা এই জুয়া খেলেন তারা বিভিন্ন গ্রাফিক্স দোকানে নানা ধরনের ভুয়া লটারির টিকিট তৈরি করেন। এই টিকিটগুলোতে একটি করে নম্বর থাকে যেটা ভুয়া। এগুলো অনলাইনে প্রচার করে প্রবাসীদের ফাঁদে ফেলে ইমুর মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হয় লাখ লাখ টাকা। পরে টাকাগুলো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে উত্তোলন করা যায়। 

পৌর শহরের কাজীরহাট মহল্লার আলিম (ছদ্মনাম), বাবা রিক্সা চালালেও তিনি এখন কোটিপটি। আসা যাওয়া করেন প্লেনে। অথচ কিছু বছর আগে তিনিও ছিলেন ভবঘুরে। তাঁর কথামতে এগুলো থাইল্যান্ডভিত্তিক একটি বৈধ লটারি। স্থানীয় জুয়াড়িরা এই লটারির আদলে নিজেরা কিছু টিকিট তৈরি করেন। সেগুলো আবার থাইল্যান্ডের টিকিট দাবি করে বিক্রি করেন। তাদের বেশিরভাগ ক্রেতাই প্রবাসীরা। সৈয়দপুর শহরে এই জুয়ার প্রাণকেন্দ্র কাজীপাড়া হলেও এখন গোটা উপজেলাসহ নীলফামারীর বিভিন্ন উপজেলায় এটা বিস্তৃত। 

সচেতন অভিভাবকের মতে, ‘চোখের সামনে একটি প্রজন্ম জুয়ার ফাঁদে পড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাদের কারণে পরিবারও নিঃস্ব হচ্ছে, অথচ আমরা কিছু করতে পারছি না। জুয়াড়ি চক্রের সদস্যরা মাঝে মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও বেশির ভাগই থাকছে অধরা।’ এ ব্যাপারে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন মনে করেন সুধীসমাজ।

মূলত ‘একটু একটু করে বেটিং খেলা থেকেই একসময় তরুণরা নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েন। একটা সময় তারা বড় ধরনের জুয়াড়িতে পরিণত হন। এতে টাকার সংকটে পারিবারিক কলহের সৃষ্টি হয়। ফলে এটি একদিকে যেমন পারিবারিক ও সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়, অন্যদিকে তাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা ক্রমেই বাড়তে থাকে। রাতে নিত্যনতুন মোটরসাইকেল নিয়ে দলবেধে এদের মহড়া এখন চোখে পড়ার মত।

অনলাইন জুয়া সম্পর্কে সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফইম উদ্দিন বলেন, ‘সৈয়দপুরে অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযানও চালাচ্ছি। বেশ কিছু জুয়াড়িদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, শুধু পুলিশি অভিমানে এ জুয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব না। এ জন্য এলাকাভিত্তিক সামাজিক প্রতিরোধ প্রয়োজন।

এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সৈয়দপুর সার্কেল) এ,কে ,এম ওহিদুন্নবী বলেন, ‘যারা অনলাইন জুয়ার সঙ্গে জড়িত তাদের অনেকেই মাদককারবারি ও ভিসা প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। অনেককেই আইনের আওতায় আনা হয়েছে।