
ঈদের ছুটিতে প্রকৃতিকন্যা মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে এবার পর্যটকের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। দীর্ঘ ছুটি পেয়ে পর্যটকেরা মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ও ইকোপার্ক ছাড়াও ছুটে গিয়েছেন সবুজ গালিচা চা বাগানে।
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার প্রাকৃতিক ঝর্ণা মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, সবুজ চা বাগান, হাকালুকি হাওর আর হাকালুকি হাওরপারের হাল্লা পাখিবাড়ি পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের জায়গা। সারা বছরই এ উপজেলার পর্যটন স্পটগুলোতে কমবেশি পর্যটকের পা পড়ে। আর বড় কোনো উৎসবের ছুটি হলে তো কথাই নেই! এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। যদিও ঈদের আগে কয়েক দিনের টানা ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে মাধবকুন্ড জলপ্রপাত এবং ইকোপার্কের অভ্যন্তরীণ রাস্তা প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তার বিভিন্ন অংশ নিচের দিকে দেবে গেছে। কোথাও কোথাও রাস্তা ৩ ফুট পর্যন্ত নিচে নেমে গেছে। ফলে ফাটলের সৃষ্টি হয়ে রাস্তা পরিণতি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছিল। বনবিভাগের কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে বালুর বস্তা ফেলে রাস্তা মেরামত করে চলাফেরার উপযোগী করে তোলেছেন।
এবার পবিত্র ঈদুল আজহার টানা ১০ দিনের সরকারি ছুটি মিলেছে। তবে, ঈদের আগে ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে মাধবকুন্ড রাস্তার ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার খবর বিভিন্ন পত্রিকা ও ইউটিউবের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা সংস্কারের খবর ছড়িয়ে পড়েনি। এবার ঈদের উৎসবে পর্যটকের ভিড় কিছুটা কম লক্ষ্য করা গেলেও আস্তে আস্তে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে ভিড় বাড়ছে। ফলে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক ও জলপ্রপাত এলাকার পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, ইজারাদারের মুখে হাসি ফুটেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মৌলভীবাজারের বড়লেখার আঞ্চলিক মহাসড়কের কাঁঠালতলি বাজার থেকে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত পর্যটনকেন্দ্রের সড়কটি ভীষণ ব্যস্ত। বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, পিকআপ ভ্যান ও মোটরসাইকেলে হইহুল্লোড় করে আনন্দ উপভোগকারিরা ছুটে চলেছেন প্রকৃতি মাধবকুণ্ডের দিকে। উপচে পড়া ভিড় জমে জলপ্রপাতের প্রবেশ ফটকের সামনের টিকিট কাউন্টারে। বিভিন্ন পণ্যের দোকান, খাবার হোটেলগুলোতেও পর্যটকের সমাগম। পায়ে হেঁটে জলপ্রপাতের দিকে এগোতেই পর্যটকরা হইহুল্লোড়ে মেতে ওঠেছেন। কেউ কেউ জলপ্রপাতের ঝর্ণার পানিতে গোসল করছেন। কেউ বা ছবি তুলছেন প্রিয়জনের সাথে। কেউ জলপ্রপাতের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছেন। স্থানীয় আলোকচিত্রীরাও পর্যটকদের ছবি তুলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
রাজনগর থেকে বেড়াতে আসা লিমন হোসেন বলেন, ঈদ উপলক্ষে মাধবকুন্ড ঘুরতে এসেছি। এই জায়গার পরিবেশটা অনেক সুন্দর ঘুরলাম অনেক ভালো লাগলো। যারা যারা এখনও মাধবকুন্ড আসেননি অবশ্যই আসবেন আর এই সৌন্দর্য উপভোগ করবেন।
রংপুর জেলা স্কুলের শিক্ষকা মুক্তি শাহা ঘুরতে এসে তিনি বলেন, ঈদের বেড়ানো উদ্যশ্যে সিলেট ভ্রমন। আজকে আমাদের দ্বিতীয় দিন। এত সুন্দর নৈশ্যগিক সৌন্দর্য আমরা সবাই মিলে উপভোগ করতেছি যে ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। খুবই আনন্দিত উল্লাসিত। মাধবকুন্ড যে এত সুন্দর তা আগে ভাবতে পারিনি। আগে গল্পের বইয়ে এখনতো ফেইসবুক ও বিভিন্ন চ্যানেলে আমরা দেখি কিন্তু আজকে বাস্তবে যে মাধবকুণ্ড দেখতে পারবো বিশ্বাস করতে পারতেছিনা। খুবই সুন্দর আমরা সবাই মিলে অনেক আনন্দ করেছি।
সিলেট থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা দেবাশীষ বলেন, পরিবার নিয়ে বেড়ানো জন্য অনেক জায়গা সিলেটে আছে তার মধ্যে মাধবকুন্ড ভালো জায়গা। ঘুরে দেখার মতে নৈশ্যর্গিক ও মনোরম জায়গা। এইরকম জায়গায় আসতে পেরে আমরা আনন্দিত এবং পূর্ণ বিনোদন উপভোগ করছি, দেখারমত চমৎকার একটা জায়গা। চারদিকের পরিবেশটা খুব সুন্দর, আর ঝর্ণাটা বেশি সুন্দর দেখার অনেক ইচ্ছা ছিল আজ দেখলাম। সবাইকে আমন্ত্রণ জানাবো সুযোগ হলে আসবেন মাধবকুন্ডে।
স্থানীয় আলোকচিত্রী রহিম উদ্দিন বলেন, ঈদ উপলক্ষে বেশ পর্যটকদের শুভাগমন হচ্ছে। কাল থেকে আজকে পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেশি। এখানে বিদেশি পর্যটকরা আসছে। মাধবকুন্ডে যে ধরনের পর্যটক চাহিদা বাড়ছে। অনেক সময় দেখা যায় পর্যটকদের জায়গা হচ্ছেনা। আমি এখানে ১৫/১৬ বছর থেকে কাজ করতেছি অনেক সময় দেখা যায় কোন কোন পরিবার ৫/৭ বার এখানে এসেছে। বিশেষ করে বাহিরের পর্যটক ও লন্ডন থেকে আসা প্যামেলি গুলো বেশি এখানে আছেন সব মিলিয়ে রুজগার ভালো হচ্ছে।
মাধবকুন্ড ইকোপর্কের প্রধান ফটকের থাকা জলপ্রপাতের টিকেট কাউন্টারের ম্যানেজার ইকবাল আহমেদ বলেন, আজকে মাধবকুন্ড ইকোপার্কে পর্যটক গতদিন থেকে বেশি আছে। সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মাধবকুন্ড ইকোপার্কের রাস্তা গুলো ভেঙে যাওয়ার দৃশ্য ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু তাৎক্ষণিক কর্তৃপক্ষ ও বনবিভাগ কর্মকর্তারা ভেঙে যাওয়া রাস্তাগুলো মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করে দিয়েছেন। পর্যটকরা নির্বিঘ্নেই আসতে পারেন।
নিরাপত্তায় দায়িত্বে থাকা পর্যটক পুলিশের এ এস আই সুমন সিংহ বলেন, ঈদ উপলক্ষে মাধবকুন্ডে প্রচুর পর্যটক আসছে। আমরা সর্বদা পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সতর্ক আছি। আশা করি কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবে না।
বন বিভাগের বড়লেখা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো. রেজাউল মৃধা বলেন, এ কদিনের ভারি বর্ষণে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের অভ্যন্তরীণ রাস্তা দেবে যায় পরে দেবে যাওয়া স্থানে পর্যটকদের সতর্ক করতে সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়। এর আগে সেখানে বালুর বস্তা ফেলে সাময়িকভাবে চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণস্থানে লাল পতাকা টাঙিয়ে রাখা হয় তবে পর্যটকেরা নির্বিঘ্নে মাধবকুণ্ডে আনন্দ উপভোগ করছেন। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য পর্যটন পুলিশ কাজ করছে। পাশাপাশি বন বিভাগ ও ইজারাদার পক্ষের লোকজন সার্বক্ষণিক কাজ করছে।
Comments