Image description

দুপুর থেকে বাসায় বাসায় গিয়ে সংগ্রহ করা হয়েছে কোরবানির মাংস। আবার সংগ্রহকৃত সেই মাংস বিক্রি করতে নীলফামারীর সৈয়দপুরে ছোট রেলঘুন্টি থেকে বড় রেলঘুন্টি পর্যন্ত রেললাইনের ধারে ভিড় করেছেন নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা। আর সেই মাংস খরিদ করতে এসেছেন হরেক রকম ক্রেতা।

কেউ হোটেল মালিক, কারো বাসায় ঈদের পরে প্রোগ্রাম তারা এসেছেন মাংস সংগ্রহ করতে, আবার কেউ সেখান থেকে খরিদ করে পাশেই বসে যাচ্ছেন আবার বিক্রি করতে কিছুটা দাম বাড়িয়ে।

এছাড়া অনেক মধ্যবিত্ত¡রা এসেছেন যাদের সামর্থ্য নেই কোরবানি দেয়ার। আবার লোকলজ্জায় কারও কাছে হাত পেতে মাংস সংগ্রহ করতে পারেন না। কিন্তু কোরবানি ইদ বলে কথা। তাইতো সস্তায় মাংস কিনতে এসেছে তাঁরা। এভাবে সৈয়দপুর ছোট রেলঘুন্টি থেকে বড় রেলঘুন্টি পর্যন্ত রেললাইনে ধারে বসেছে যেন এক নতুন হাট। দানে পাওয়া কোরবানির মাংস কেনা বেচার হাট।

বাজারের দামের চেয়ে কম দামে পাওয়া যায় বলে সে মাংস খরিদ করতে অনেকে ভিড় করেন এখানে। সরেজমিনে ঈদের দিন বিকালে সৈয়দপুর ছোট রেলঘুন্টি রেললাইনের ধারে গেলে কোরবানির মাংস বিক্রির এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। চলে ঈদের ৩ দিন পর্যন্ত, তবে বেশি ভিড় থাকে ঈদের দিন। কোরবানির মাংস কেনা-বেচার এই ভ্রাম্যমাণ হাটে হরেক রকম ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম।

সৈয়দপুরের পার্শ্ববর্তী টেক্সটাইল থেকে এসেছেন কফিল উদ্দিন। কোরবানি দেয়ার সামর্থ্য রাখেন না তিনি। আবার লোকলজ্জায় কারও কাছে হাত পেতে মাংস সংগ্রহ করতেও পারেন না। তাই ভ্রাম্যমাণ বাজার থেকে মাংস কিনে পরিবারের মুখে তুলে দেয়ার চেষ্টায় এসেছিলেন রেললাইনের ধারে। প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা করে ২ কেজি মাংস নিয়ে বাড়ি ফিরেন তিনি। কফিলের মতো এসেছেন সালমা বেগম, দিন মজুর খুরিশদ আলম, রিকশাচালক শরিফ উদ্দিন, রেয়াজ উদ্দিনসহ আরও অনেকে। তারা বলেন, কোরবানি দেয়া হয়নি। পরিবার নিয়ে থাকি। তারা তো কোরবানির মাংস খেতে চায়। বাচ্চারা আছে। তাই একটু মাংস কিনতে এলাম। তারা বলেন, ৫২০ থেকে শুরু করে ৫৮০ টাকা কেজি দরে এখানে মাংস পাওয়া যায়। কয়েক কেজি মাংস কিনে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি, যাতে পরিবার পরিজন নিয়ে ভালোভাবে ইদ কাটানো যায়। 
আবার এসব মাংসের ক্রেতা হচ্ছেন কেউ হোটেল মালিক, কেউ মধ্যবিত্ত আবার অনেকে সেখানে খরিদ করে কিছুটা দাম বাড়িয়ে আবার সেখানেই বিক্রি করতে বসে যাচ্ছেন।

এসব লোকদের মতো অনেকেই আছেন, যারা কোরবানির বিলানো এসব মাংস কিনছেন। আর মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোরবানির মাংস এনে তা কেজি দরে বিক্রি করছেন সৈয়দপুর রেললাইনের ধারে এসব নিম্নআয়ের মানুষ। মাংস বিক্রি করতে আসা রওশন বেওয়া, হকার সিরজ উদ্দিন জানান, ঈদের দিন মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোরবানির মাংস সংগ্রহ করেছি। সাড়ে ৩ কেজির মতো হয়েছিল।

১ কেজি খাবারের জন্য রেখে বাকি মাংস বিক্রি করেছি। এতে কিছু টাকাও হয়েছে। যেটা অন্য কাজে ব্যবহার করতে পারব। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেখানে কয়েক মণ মাংস বিক্রি হয়ে যায়। বহু মানুষের ভিড় জমে এখানে। বিক্রেতারা বাজারের ব্যাগে করে সংগ্রহ করা মাংস বিক্রি করছেন। মাংসের মানভেদে ৫২০ থেকে ৫৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। তবে ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে অনেক হোটেল মালিকরাও এসেছেন কম দামে মাংস নিতে যাতে হোটেলে বিক্রি করা যায়। চম্পাতলীর হোটেল মালিক মামুন জানান, ৫৫০ টাকা কেজি দরে ৮ কেজি মাংস কিনেছি, যাতে হোটেলে রান্না করে বিক্রি করা যায়। আরেক ক্রেতা জানান, ঈদের পরেই বাসায় বিয়ের প্রোগ্রাম তাই কম দামে এখান থেকে মাংস সংগ্রহ করতে এসেছি।

এদিকে ভ্রাম্যমাণ ওই মাংসের হাটে কেউ কেউ ডিজিটাল পাল্লাও নিয়ে বসেছেন। ক্রেতা কিংবা বিক্রেতা মাপার জন্য দিতে হচ্ছে ১০ টাকা করে। এভাবে সুজু নামে একজন জানান শুধু মাংস মেপে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১২শ টাকা আয় করেছি।
এভাবে সৈয়দপুরে জমে উঠা দানে পাওয়া মাংসের বাজারে জমে ৩ দিনে প্রায় ২ থেকে ৩ লাখ টাকার মাংস কেনা-বেচা হয়।