বংশী নদী থেকে বিএনপি নেতার বালু উত্তোলন, ঝুঁকিতে ব্রিজ ও রাস্তা

ধামরাই উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের যাদবপুর এলাকার বংশী একটি শুকনো নদী। এই নদী থেকে বালু উত্তোলনের জন্য নদীর পাশের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে পাইপ দিয়ে পানি এনে মাটি নরম করে সেই নদী থেকে বালু মাটি উত্তোলন করছে ইউনিয়ন বিএনপির এক নেতা। ১০ লক্ষ টাকার সরকারি রাস্তা মেরামতের নামে বালু উত্তোলন করছেন বিএনপির সেই নেতা। কিন্তু সেই মাটি রাস্তায় না পড়ে অন্যের পুকুর ভরাট করছেন। শরীফ নামে এক ঠিকাদারের লাইসেন্স ব্যবহার করে রাস্তার কাজ করছেন তিনি। তবে ঠিকাদার কোন জায়গা থেকে বালু নিচ্ছেন জানেন না।
একাধিক ভুক্তভোগীরাও এ বিষয়ে কেউ কোন কথা বলতে সাহস পায় না। বালু উত্তোলনের ফলে প্রায় ২০-২৫ ফুটের মতো গভীর হয়ে গেছে। ভেঙে পড়ছে রাস্তার পাড় ও সবজির ক্ষেতের পাড়। এছাড়াও নদী থেকে বালু উত্তোলন করায় ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ১০০ ফুট দূরে নির্মিত একটি ব্রিজ, নদীর পাড়ের জমি ও বসত বাড়ি এবং সন্নিকটেই রয়েছে যাদবপুর বিএম স্কুল এন্ড কলেজ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ নিয়ে এলাকায় চলছে সমালোচনার ঝড়। বিএনপির এই নেতার দাপটে তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পায় না।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি রয়েছে বলে দাবি করে বংশী নদী থেকে বালু উত্তোলন করছেন যাদবপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বাদশা। তিনি ধরাকে সরা জ্ঞান করে রাস্তায় মাটি ফেলাকে অজুহাত দেখিয়ে নিজস্ব একটি বাহিনী নিয়ে এই বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন। দিনরাত সব সময় এই বালু উত্তোলন করছেন। কথায় কথায় বলেন, আমার ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি রয়েছে। নদী থেকে বালু উত্তোলন করে রাস্তায় না ফেলে অন্যের পুকুর, নিচু জমি ভরাট করছে। বিনিময়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের যাদবপুর এলাকায় যাদবপুর বিএম স্কুল এন্ড কলেজের পিছনে বংশী নদী থেকে বালু উত্তোলন করছেন ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বাদশা। শুকনো নদীতে পানি দিয়ে মাটি নরম করে বালু উত্তোলন করছে। বালু উত্তোলনের ফলে বর্তমানে প্রায় ২০-২৫ ফুট গর্ত হয়ে গেছে ঔই নদীতে। ভেঙে পড়ছে পাশের রাস্তা ও সবজি ক্ষেতের পাড়। ঝুঁকিতে রয়েছে পাশের ব্রিজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। একাধিক ভুক্তভোগী এ বিষয়ে বিএনপির ঔই নেতাকে বাধানিষেধ করলেও তিনি কর্ণপাত করেন নি। নিজের লোকজন নিয়ে সব সময় বালু মাটি উত্তোলন করছেন। কেউ বাধা দিলে তাদের ভয়ভীতি ও বাড়িতে হামলা করারও হুমকি দিয়েছেন বলে জানা যায় ভুক্তভোগীদের কাছে থেকে। কিন্তু প্রায় ১০০ ফুট পশ্চিমে নদীর উপর রয়েছে একটি ব্রিজ, নদীর পাড় ঘেষা সরকারি রাস্তা ও বিএম স্কুল এন্ড কলেজ। উত্তর পাশে রয়েছে চাষের জমি। যদি সব সময় নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হয় তাহলে ঝুঁকিতে পড়বে ঔই ব্রিজ ও রাস্তা, সবজি ক্ষেত। যাদবপুর ইউনিয়নের যাদবপুর এলাকায় ১৪০ মিটার রাস্তা ও পাশে গাইড ওয়ালের জন্য ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে যাদবপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বাদশা বলেন, রাস্তা ভরাট করার জন্য নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের অনুমতি আছে। কিন্তু অনুমতি পত্র চাইলে তিনি দেখাতে পারেন নি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামনুন আহমেদ অনীক এর নাম ভাঙিয়ে তিনি বালু উত্তোলন করছেন। কিন্তু একটি স্কুল থেকে পাইপ দিয়ে পানি এনে নদীর মাটি নরম করছেন। স্কুল থেকে পানি আনতে পারেন কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং নদীতে ড্রেজার বসানোর বিষয়ে উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী সেলিম হোসেন এর কথা বলেন। তিনি মাপ দিয়ে দিয়েছেন বালু উত্তোলনের জায়গার। উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী সেলিম মিয়ার নামও ভাঙিয়েছেন বিএনপির ঔই নেতা।
হাবিবুর রহমান বাদশা আরো বলেন, ইউএনও এর মৌখিক অনুমতি নিয়ে বালু উত্তোলন করছি। কিন্তু তিনি লিখিত কোন অনুমতি দেন নাই। ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব, ইউএনও এবং ডিসি অফিস বিষয়টি জানেন বলেও বিএনপির এই নেতা নাম ভাঙিয়ে থাকেন। হাবিবুর রহমান বাদশা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এমন কাজ করছেন বলে জানা যায়। ১০ লক্ষ টাকার রাস্তার কাজের জন্য বালু নিচ্ছে নদী থেকে। এতে ঝুঁকিতে রয়েছে ব্রিজ, স্কুল এবং সবজি ক্ষেত ও বনত বাড়ি। বালু রাস্তা মেরামতের জন্য ব্যবহার না করে অন্য লোকের পুকুর ভরাট করছেন বলে জানা যায়।
স্থানীয়দের কাছে থেকে জানা যায় রাজু, আমিনুর রহমান, আশিক মোল্লা, ভাসানী মোল্লা ও বাবু নামে বিএনপির নেতা হাবিবুর রহমান বাদশার লোক। তাদের ভয়ে কেউ কোন কথা বলতে পারেন না। সবাই এই ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত।
ড্রেজার বসানোর বিষয়ে নদীর পাড়ে ভুক্তভোগী সহিমুদ্দিন ও তার ভাইয়ের রয়েছে প্রায় ১৪০ শতাংশ জমি। ওই জমিতে লেবু ও সবজি চাষ এবং গরুর ঘাস চাষ করছেন।
সহিমুদ্দিন বলেন, এভাবে ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন করলে আমাদের জমি ভেঙে পড়ে যাবে। শুধু আমাদের জমিই নয় পাশে রয়েছে একটি ব্রিজ, সরকারি রাস্তা, আমার ভাইয়ের জমি ও একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সবই ঝুকির মধ্যে পড়বে। যদি সরকারি কাজে মাটি কাটা হয় তাহলে কোন সমস্যা নাই। ওদের কোন অনুমতি নাই। বাঁধা দিতে গেলেই হুমকি দেয়। বাড়িতে হামলা করার হুমকিও দিয়েছে। নদীতে প্রায় ২০-২৫ ফুটের মতো গর্ত হয়ে গেছে। পাশে রাস্তা ও জমির আইল ভেঙে পড়ছে। আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামনুন আহমেদ অনীক এর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমাদের আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
এছাড়াও রেজাউল করিম টিটু ও কুলসুম আক্তার রুবি তাদের জমির পাশে নদী থেকে বালু উত্তোলনে বাঁধা দেন। কিন্তু ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বাদশা ও তার লোকজন কোন কথাই কর্ণপাত করেনি। উল্টো তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন।
কিন্তু পাশের স্কুল থেকে পাইপ দিয়ে পানি আনার বিষয়ে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক আকলিমা আক্তারের কোন সদুত্তর পাওয়া যায় নি। কারণ তার স্বামী একজন সরকারী চাকরিজীবি। তিনিও নাকি এই বালু ব্যবসার সাথে জড়িত।
এ বিষয়ে ঠিকাদার শরিফুল ইসলাম বলেন, আমার লাইসেন্স ব্যবহার করে কাজটি করছেন ইউনিয়ন বিএনপির নেতা হাবিবুর রহমান বাদশা। আমাকে কিছু খরচ দিতে পারে কারণ আমার লাইসেন্স ব্যবহার করছে। রাস্তার কাজ দেখেছি নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে। যদি উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি না থাকে তাহলে বালু উত্তোলন করতে পারবে না। আমার লাইসেন্স ব্যবহার করছে কিন্তু মূলত পুরো কাজ করছে বাদশা ও তার লোকজন।
আপনার লাইসেন্স দিয়ে কিভাবে আরেকজন কাজ করছে এমন প্রশ্ন করলে ঠিকাদার শরিফুল ইসলাম কোন উত্তর দিতে পারেন নি।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব মাজহারুল ইসলাম বলেন, বংশী নদী থেকে বিএনপি নেতার বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমি জানি না এবং আমার অফিসে এ বিষয়ে কোন অনুমতি পত্রও নাই।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী সেলিম হোসেন বলেন, আমি ড্রেজারের বিষয়ে কিছুই জানি না। আমার কাজ রাস্তা দেখা। কোথায় থেকে মাটি এনে ভরাট করবে তা আমার বিষয় না। রাস্তার কাজ করলে বিল পাবে আর করতে না পারলে বিল তুলতে পারবে না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামনুন আহমেদ অনীককে এ বিষয়ে ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
Comments