
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায় চলন্ত ট্রেনের দরজার বাইরে ঝুলন্ত অবস্থায় এক ব্যক্তিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নসরতপুর রেলস্টেশন এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। ৩৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাটি জানাজানি হয়।
ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়া ওই ব্যক্তির নাম মতিউর রহমান (৪৫)। তার বাড়ি নওগাঁর রানীনগর উপজেলার পারইল গ্রামে। ভিডিওতে মতিউরকে চোর ও ছিনতাইকারী দাবি করা হলেও, অনুসন্ধানে ভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মতিউর রহমান পেশায় অটোরিকশাচালক এবং গত দুই বছর ধরে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশে লোক পাঠানোর কাজ করতেন। অভিযোগ উঠেছে, ১৫ দিন আগে তিনি আদমদিঘী উপজেলার তালশান গ্রামের মোহাম্মদ হেলালের ছেলে সজীব হোসেনকে সাড়ে ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে সৌদি আরবে পাঠান। তবে, সৌদি আরবে গিয়ে বৈধ কাগজপত্র পেতে দেরি হওয়ায় সজীবের পরিবারের সদস্যরা সপ্তাহখানেক আগে মতিউরের বাড়িতে যান এবং এ বিষয়ে জানতে চান। এর জের ধরে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।
মতিউর রহমানের ছেলে আহসান হাবিব জানান, বগুড়া থেকে ট্রেনে করে বাড়ি ফেরার পথে সজীবের ছোট ভাই রাকিব এবং সজীবের শ্যালকরা তার বাবাকে একা পেয়ে মোবাইল চোর ও ছিনতাইকারী আখ্যা দিয়ে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। প্রায় ৪-৫ মিনিট তাকে ট্রেনের দরজায় ঝুলিয়ে রাখা হয়। একপর্যায়ে ট্রেনটি নসরতপুর স্টেশনে পৌঁছালে প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মতিউর ট্রেনের নিচে পড়ে যান। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
আহসান হাবিব আরও অভিযোগ করেন, থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে আদমদীঘি থানা পুলিশ অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে এবং সান্তাহার রেলওয়ে থানায় গিয়ে অভিযোগ করার পরামর্শ দেয়। সান্তাহার রেলওয়ে থানা পুলিশ আবার জানায়, মতিউর মারা গেলে মামলা নেওয়া যাবে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, তার বাবা ছিনতাইকারী নন, তিনি বৈধ ব্যবসা করেন, এবং তিনি এই ঘটনার বিচার চান।
সান্তাহারের বাসিন্দা নেহাল আহমেদ জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে মতিউরকে চেনেন এবং তার মাধ্যমে তার দুই আত্মীয়কে সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছেন। তাদের কোনো সমস্যা হয়নি এবং মতিউরের সঙ্গে লেনদেন নিয়ে তিনি কখনো কোনো ঝামেলা দেখেননি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে রাকিব হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে, সজীবের বাবা মোহাম্মদ হেলাল জানান, ৪০ দিন আগে তিনি মতিউরের মাধ্যমে তার ছেলেকে সৌদি আরবে পাঠিয়েছেন। কিন্তু তার ছেলে এখনো কাজের সুযোগ পাননি। এ নিয়ে তিনি মতিউরের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও মতিউর এড়িয়ে চলছিলেন। সাত-আট দিন আগে তারা মতিউরের বাড়িতে গিয়েছিলেন ছেলের বিষয়ে জানতে। তবে সেখানে কোনো ঝামেলা হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।
মতিউরকে ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় তিনি বলেন, বগুড়া থেকে আসার সময় সজীবের শ্যালকরা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়, তবে রাকিব সেখানে ছিলেন না। ট্রেনে আসলে কী ঘটেছিল, তা তিনি জানেন না।
আদমদীঘি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এটি রেলওয়ে পুলিশের বিষয় হওয়ায় তারা কোনো অভিযোগ গ্রহণ করেননি।
অন্যদিকে, সান্তাহার রেলওয়ে থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি জিআরপি) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, অভিযোগকারীরা প্রথমে আদমদীঘি থানায় গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে তাদের জিআরপিতে পাঠানো হয়। এরপর তারা তার থানায় এসেছিলেন, তবে আদমদীঘি থানা থেকে ফোন পেয়ে তারা আবার সেখানে চলে যান এবং পরবর্তীতে আর থানায় আসেননি। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং তারা অভিযোগ ও তদন্ত সাপেক্ষে মামলা নেওয়ার জন্য সবসময় প্রস্তুত।
Comments