Image description

সোনালি আঁশ খ্যাত পাট চাষাবাদে বছর বছর বাড়ছে উৎপাদন খরচ। তবে সেই অনুযায়ী বাজারে মিলছে না পাটের প্রত্যাশিত দাম। ফলে উৎপাদন ব্যয় এবং বিক্রয় মূল্যের ক্রমবর্ধমান ব্যবধানে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ফরিদপুরের পাট চাষিরা। গত বছর প্রতি মণ পাট প্রকারভেদে ২৫শ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও, উৎপাদন ব্যয়ের সাথে তা প্রায় সমান ছিল। এতে লাভের মুখ না দেখায় কৃষকদের চোখে-মুখে ছিল হতাশার ছাপ।

পাট উৎপাদনে দেশসেরা জেলা ফরিদপুর, আর এই জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাট আবাদ হয় সালথা উপজেলায়। চলতি মৌসুমেও এই উপজেলায় প্রায় ১২ হাজার ৭শ হেক্টর জমিতে পাটের চাষাবাদ হয়েছে, যা এখানকার মোট কৃষি জমির প্রায় ৯০ শতাংশ। তবে চাষিরা জানিয়েছেন, এবার পাটের উৎপাদন খরচ কমপক্ষে ৩০ শতাংশ বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে উৎপাদন খরচের লাগাম টেনে ধরতে কৃষি বিভাগের সহযোগিতা চেয়েছেন স্থানীয় পাটচাষিরা।

সম্প্রতি সরেজমিনে সালথা উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা পেঁয়াজ তোলার পরপরই এখন পাট আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ইতোমধ্যে বীজতলা থেকে চারা গজাতে শুরু করেছে। যারা আগে বীজ বপন করেছিলেন, তাদের ক্ষেতের চারা দুই থেকে তিন ইঞ্চি লম্বা হয়েছে। বর্তমানে পাটচাষিরা কেউ জমিতে সেচ দিচ্ছেন, আবার কেউ আগাছা পরিষ্করণে ব্যস্ত।

তবে শুকনো মৌসুমে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। একই সাথে পাট চাষের সাথে জড়িত সার, কীটনাশকসহ প্রায় সকল উপকরণের দাম এবং শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর উপর উৎপাদিত পাটের ন্যায্য দাম না পাওয়ার দুশ্চিন্তা ভর করেছে কৃষকদের মাঝে।

সালথার পাটচাষি সহিদ মিয়া জানান, গত কয়েক বছর ধরে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে নিচে নেমে গেছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, অনেক শ্যালো মেশিনেও পানি উঠছে না। এর ফলে জমিতে সেচ দেওয়ার খরচ প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে সার ও কীটনাশকের দাম। এই পরিস্থিতিতে উৎপাদন ব্যয়ের সাথে আয় মেলানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুদর্শন শিকদার জানান, বীজ বপনের সময় পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কৃষকদের নিজস্ব অর্থায়নে সেচ দিতে হয়েছে, যা উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়েছে। তবে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলে পাট জাগানো নিয়ে তেমন সমস্যা হবে না। তিনি আশা প্রকাশ করেন, পাটের সন্তোষজনক দাম পেলে কৃষকরা লাভবান হবেন।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈরী আবহাওয়া অনেক ক্ষেত্রেই উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি করে। তবে সঠিকভাবে পরিচর্যা করে উৎপাদন বাড়ানো গেলে ব্যয়ের হার কিছুটা কমানো সম্ভব।