
এককালে স্রোতস্বিনী, মাদারীপুরের জীবনরেখা ছিল কুমার নদ। চরমুগরিয়া বন্দর, টেকেরহাট বন্দর, রাজৈর উপজেলা - সব যেন এই নদীর আঁচলেই গড়ে উঠেছিল। আজ সেই নদী মৃতপ্রায়, যেন এক দীর্ঘশ্বাসের প্রতিচ্ছবি। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দুই দফায় ১২০০ কোটি টাকা খরচ করেও ফেরানো যায়নি নদীর হারানো যৌবন। গচ্চা গেছে সরকারের এই বিপুল পরিমাণ টাকা। স্থানীয়রা নদীটি পুনরায় খননের দাবি জানান। পানি উন্নয়ন বোর্ড আশ্বাস দিলেন দখল মুক্ত করে নদী খননের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুই দশক আগেও মাদারীপুর থেকে খুলনা যাতায়াতের একমাত্র জলপথ ছিল কুমার নদ। শুধু খুলনা নয়, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুরের সঙ্গেও নৌপথে যোগাযোগ ছিল মাদারীপুরের। কুমার নদের ছিল রূপ, যৌবন আর গভীরতা। খুলনা থেকে বড় বড় স্টিমার আসতো মাদারীপুরের চরমুগুরিয়ায়। স্টিমারের গর্জন শুনে নদীর পাড়ের মানুষের মনে ভয় জাগতো। পালতোলা নৌকার সারি ছিল নিত্যদিনের দৃশ্য। আজ সেই নদী মৃতপ্রায়। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে নদীর যৌবন, উচ্ছ্বাস। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে নদী খননের জন্য দুই দফায় ১২০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কুমার নদ এখনও মৃতপ্রায়।
রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, কুমার নদের জমি দখল করে একের পর এক স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। দখল আর দূষণের বিষে নীল হয়ে গেছে এককালের স্রোতস্বিনী কুমার নদ। আজ সরু খালের মতো বয়ে চলেছে নদীটি, কোথাও কোথাও নদীর বুকেই সবুজের সমারোহ, ফসলের ক্ষেত। প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। দূষণ আর অবৈধ দখলের কারণে নদটি হারিয়েছে তার অতীত রূপ। নদের কিছু অংশ এতটাই দূষিত হয়ে পড়েছে যে, দুর্গন্ধে পশু-পাখিরাও এর পানি পান করতে পারে না।
স্থানীয় বাসিন্দা মোকসেদ শেখের কথায় ফুটে ওঠে নদীর করুণ দশা, "আগে এই নদের পানি সব কাজে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন ময়লা-আবর্জনায় দূষিত হওয়ায় পানি ব্যবহার করা যায় না। নদীতে এখন গোসল করা তো দূরের কথা, পানির দুর্গন্ধের কারণে কাছেই যাওয়া যায় না।"
আরেক বাসিন্দা মিনহাজ হাওলাদার বলেন, "পরিবেশ রক্ষায় কুমার নদের দূষণরোধে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কয়েক বছর আগে এই নদী খননের জন্য ১২০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়। অথচ এখন এই নদীর অস্তিত্বই বিপন্ন।"
মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সানাউল কাদের চৌধুরী জানান, নদী খননের জন্য ডিপিপি প্রণয়ন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। অনেক আগে বিআইডব্লিউটিএ-এর মাধ্যমে নদী খনন করা হয়েছিল। অবৈধ দখল উচ্ছেদের কাজও চলমান রয়েছে বলে তিনি জানান।
Comments