Image description

বাংলাদেশ যুব ফ্রন্টের আয়োজনে যুব কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বিকেল ৪টায় টিএসসির সেমিনার হলে এই কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। 

সংগঠনের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক রাশেদ শাহরিয়ারের সভাপতিত্বে ও সদস্য প্রেমানন্দ দাসের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এই কনভেনশনে বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম, লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ, বাসদ (মার্কসবাদী)-এর সমন্বয়ক মাসুদ রানা এবং শিক্ষক ও গবেষক মাহা মির্জা। 

প্রারম্ভিক বক্তব্য উত্থাপন করেন যুব ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সদস্য রবিউল করিম নান্টু।

সভায় বক্তারা বলেন, "জনগণের সুমহান আত্মত্যাগ ও তীব্র ছাত্র আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট শাসনের পতন হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, চাকরিতে বৈষম্যের বিরুদ্ধে এ আন্দোলনের সূত্রপাত হলেও যুবকদের বেকারত্ব নিরসনে কোনো পরিকল্পনা অন্তবর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়নি। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য সংস্কার কমিশন গঠিত হলেও কর্মসংস্থান তৈরিতে পলিসি প্রণয়নের কোনো উদ্যোগ লক্ষণীয় নয়।

তারা বলেন, দেশের প্রায় ৪১ শতাংশ যুবক নিষ্ক্রিয়। এই নিষ্ক্রিয়তার মানে এসব যুবক পড়াশোনা, প্রশিক্ষণ বা কর্মসংস্থান- কিছুতেই যুক্ত নয়। দেশে স্নাতক পাস বেকারের সংখ্যা গত ৯ বছরে ৩ গুণ বেড়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে মোট বেকারের ৯.৭শতাংশ ছিল উচ্চশিক্ষিত। আর ২০২২ সালে এসে তা ২৭.৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় দেশের প্রায় ৭৮ শতাংশ তরুণ নিজেদের কর্মসংস্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন। 

বর্তমানে ৫ লাখের বেশি সরকারি পদ শুন্য থাকলেও নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। বেসরকারি খাতেও যথেষ্ট কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে না। বেকার যুবকরা দিশাহীন জীবনযাপন করছে। হতাশায় আক্রান্ত হচ্ছে, মানসিক বিষণ্নতা, মাদকাসক্তিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ মাদকাসক্তই তরুণ যুবক।

আরো বলেন, মুনাফা বেশি করতে হলে পুঁজিপতিদের প্রয়োজন সস্তা শ্রম। তাই পুঁজিপতি গোষ্ঠী একদিকে বেকার সংকট জিইয়ে রেখে সস্তা শ্রমের জোগান নিশ্চিত করতে চায় অন্যদিকে শোষণমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় জনগণের ক্রয়ক্ষয়তা ক্রমাগত কমতে থাকায় বাজার সংকটের কারণে ক্রমাগত শিল্পায়ন করতে পারে না। অবাধ শিল্পায়ন না হওয়ায় বেকার সংকটও টিকে থাকে। এমতাবস্থায় আমরা মনে করি বর্তমানে যুবসমাজের বেকারত্ব ও সাংস্কৃতিক সংকট নিরসনের জন্য এই শোষণমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সমাজতান্ত্রিক আদর্শে উদ্বুদ্ধ একটি যুব আন্দোলন আজ সময়ের দাবী।"

যুব ফ্রন্ট তাদের কনভেনশন থেকে নিম্নোক্ত দাবিসমূহ উত্থাপন করা হয়।
দাবিসমূহ: 
১. বেকারত্ব নিরসনে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।
২. বিভাগীয় শহরগুলোতে চাকরির পরীক্ষা নিতে হবে।
৩. অবিলম্বে সরকারি শূন্যপদে নিয়োগ দিতে হবে। পিএসসি সংস্কার ও বিসিএস পরীক্ষার দীর্ঘসূত্রিতা কমাতে হবে। এক বছরের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে।
৪. অনলাইন নিবন্ধনের মাধ্যমে বেকার যুবকদের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। চাকরি না হওয়া পর্যন্ত বেকার ভাতা দিতে হবে।
৫. বেসরকারি চাকরিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। চাকরি ও বদলিতে ঘুষ-দুর্নীতি-স্বজনপোষণ ও দলীয়করণ বন্ধ করতে হবে।
৬. বন্ধ রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্প কারখানা সমূহ পুনরায় চালু এবং নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু করতে হবে।
৭. জাতীয় বাজেটে কর্মসংস্থানের জন্য সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখতে হবে। জাতীয় নূন্যতম মজুরি কাঠামো ঘোষণা করতে হবে।
৮. যুবকদের মনন ও সংস্কৃতির সুস্থ বিকাশে এলাকাভিত্তিক গণপাঠাগার গড়ে তুলতে হবে। শহরাঞ্চলে যুব কর্মজীবী হোস্টেল তৈরি করতে হবে।