
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন নিয়ে ওঠা ১৬টি অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’। সোমবার এক বিবৃতিতে সংগঠনটি এই নির্বাচনকে পক্ষপাতদুষ্ট এবং অগ্রহণযোগ্য বলে আখ্যা দিয়েছে, যার দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপর বর্তায়।
শিক্ষক নেটওয়ার্কের বিবৃতিতে জাকসু নির্বাচনের নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কথা তুলে ধরা হয়েছে-
ত্রুটিপূর্ণ ভোটার ও ব্যালট: ভোটার তালিকা এবং ব্যালট পেপার উভয়ই ত্রুটিপূর্ণ ছিল।
প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল: চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায়কে 'অনিয়মিত ছাত্র' দেখিয়ে তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। আদালত তার পক্ষে রায় দিলেও প্রশাসন আপিল করে এবং ব্যালট পেপার ছাপা হয়ে যাওয়ার অজুহাতে আদালতের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দেয়।
পরস্পরবিরোধী তথ্য: ডোপ টেস্টের দিন নির্বাচন কমিশন প্রথমে জানায় ব্যালট পেপার ছাপা হয়নি, কিন্তু পরে ব্যালট পেপার ছাপানো হয়ে গেছে বলে জানায়, যা কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
ব্যালট বাক্স স্থানান্তর: নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স হলে হলে পাঠানো হয়, যা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সন্দেহজনক।
পোলিং এজেন্ট নিয়ে জটিলতা: প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট রাখার অনুমতি দেওয়া হলেও শেষ মুহূর্তে বৈষম্য তৈরি করা হয়। কোনো কোনো প্রার্থীর পোলিং এজেন্টকে পরিচয়পত্র দিতে গড়িমসি করা হয়, যা নির্বাচনের স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
জালিয়াতির অভিযোগ: ভোটার তালিকায় নাম না থাকায় অনেক বৈধ শিক্ষার্থী ভোট দিতে পারেনি, কিন্তু জাল ভোটের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অমোচনীয় কালির দাগ উঠে যাওয়ার ঘটনাও ভোট কারচুপির সুযোগ তৈরি করে।
ভোট গণনায় অব্যবস্থাপনা: ওএমআর পদ্ধতিতে ভোট গণনায় প্রশ্ন ওঠায় হাতে গণনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে ৪৮ ঘণ্টা পর ফলাফল ঘোষণা করা হয়, যা ব্যালট বাক্সগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন সৃষ্টি করে।
কমিশনারদের পদত্যাগ: নির্বাচনের নানান দায়িত্বে থাকা ৩ জন শিক্ষক অতিরিক্ত ব্যালট পেপার সরবরাহ ও অমোচনীয় কালির দাগ উঠে যাওয়ার অভিযোগে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। এছাড়া ৫ জন নির্বাচন কমিশনারের মধ্যে ২ জন নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে পদত্যাগ করেন, যদিও বাকি ৩ জন কমিশনারের স্বাক্ষরে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
শিক্ষক নেটওয়ার্কের মতে, এসব ঘটনা প্রমাণ করে যে, প্রশাসন যেকোনো উপায়ে একটি নির্দিষ্ট দলকে জেতানোর জন্য কাজ করেছে। তারা নির্বাচনের প্রাক্কালে ওএমআর যন্ত্রের দরপত্র বিষয়ক অভিযোগ এবং তার পরবর্তী অব্যবস্থাপনাকে প্রশাসনের চরম দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তারা বলছেন, “সহকর্মীদের ওপর অকথ্য পরিশ্রম চাপানোর কারণ তৈরি করেছে এটা। তখনই প্রশাসনের তাৎক্ষণিক জনবলবৃদ্ধি আবশ্যক ছিল।”
দীর্ঘ ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে উদ্দীপনা তৈরি করেছিল, তা এই বিতর্কিত প্রক্রিয়ার কারণে নষ্ট হয়েছে বলে শিক্ষক নেটওয়ার্ক মনে করে। এ কারণে তারা এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সমস্ত কারসাজি উন্মোচনের দাবি জানিয়েছে।
Comments