রাবিপ্রবি’তে তিনদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক কনফারেন্স এন্ড বায়োসায়েন্স কার্নিভাল শুরু

অর্ন্তবর্তী সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেছেন, মৎস্য সম্পদের উৎপাদন বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগকে গুরুত্ব দিতে হবে। এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে এবং বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রসারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতা থাকবে যাতে এটি এখানকার জাতি নির্বিশেষে জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ও উন্নত জীবিকা নিশ্চিত করবে। কাপ্তাই হ্রদ জীবিকার বিকল্প পথ সৃষ্টি করেছে। মৎস্য চাষের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি দুর্গম এলাকা থেকে ফলজ এবং বনজ পণ্য পরিবহনে সুযোগ তৈরী করেছে।
শুক্রবার ( ১৬ মে) বিকালে রাঙ্গামাটির পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের সম্মেলন কক্ষে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রাবিপ্রবি) ও বাংলাদেশ বায়োসেইফটি ও বায়োসিকিউরিটি সোসাইটি (বিবিবিএস) এর যৌথ উদ্যোগে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক কনফারেন্স এন্ড বায়োসায়েন্স কার্নিভাল (আইসিবিসি) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, রাবিপ্রবি'র ভাইস-চ্যান্সেলর ও আইসিবিসি’র চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোঃ আতিয়ার রহমান। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথমবারের মত বায়োসায়েন্স কনফারেন্স ও কার্নিভাল আয়োজন করতে পেরে শুধুমাত্র রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-ই গর্বিত নয় পার্বত্য চট্টগ্রামের সবাই গর্বিত। এধরনের কনফারেন্স বিশ্ববিদ্যালয়কে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষদের অপূরণীয় চাহিদা এবং বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দিবে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পরে প্লেনারী সেশনের প্রথম বক্তা হিসেবে আইসিডিডিআরবি বায়োসেফটি এর প্রধান ও বাংলাদেশ বায়োসেফটি এন্ড বায়োসিকিউরিটি সোসাইটি এর সভাপতি ড. আসাদুল গণি বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, টেকসই স্বাস্থ্যসেবা একটি বহুবিষয়ক পদ্ধতি (মাল্টিডিসিপ্লিনারি এপ্রোচ) শুধুমাত্র মেডিকেল সায়েন্স, মাইক্রোবায়োলজি, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথমেটিক্স, স্ট্যাটিসটিকস-সহ এধরনের সব ডিসিপ্লিন একসাথে জড়ো করে মানুষ এবং প্রাণীকূলের সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবা (ওয়ান হেলথ) নিশ্চিত করার জন্য কাজ করতে হয়। ২০২৫ সালে উন্নত বিশ্বে বায়োটেকনোলজি মাধ্যমে ল্যাব অটোমেশন চালু করছে- যেখানে বায়োসেফটি লেভেল ফোর নিশ্চিত করতে ল্যাব রোবট দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরা আহসান বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ঔষধ আবিষ্কারে সঠিক উৎস নির্বাচনে নির্ভুলতা ও কার্যকারিতা নির্ধারণে কাজ করে। এআই অল্প সময়ের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান এবং ডাটাবেইজকে একত্রিত করে নতুন ঔষধ তৈরীতে সহায়তা করে।
গেস্ট অব অনার হিসেবে বক্তব্য রাখেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে মেধার অভাব নেই। পর্যাপ্ত গবেষণাগার এবং গবেষণা উপকরণের অভাব রয়েছে তাই বিজ্ঞানের চর্চায় যেসব বাধা রয়েছে সেগুলো দূর করে অব্যাহত রাখতে হবে। ইন্ডাস্ট্রি এবং একাডেমিয়ার একটা সর্ম্পক গড়ে তুলতে হবে। ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজন নতুন উদ্ভাবন এবং আমাদের উদ্ভাবন করার জন্য আছে নতুন প্রজন্ম। এদের একটা সেতু বন্ধন যদি আমরা গড়তে পারি তাহলে আমরা এগিয়ে যাবো।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান বাংলাদেশের বিশিষ্ট জীন বিজ্ঞানী ও বহুব্রীহি ধানের আবিষ্কারক ড. আবেদ চৌধুরী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের খাদ্য সুরক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় এ অঞ্চলে সারাবছর খাদ্যশস্য উৎপাদন এবং একই ধান গাছ থেকে পাঁচবার ফসল আহরণ নিশ্চিত করতে পঞ্চব্রীহি ধান চাষের সম্ভবনার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি আরো বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে আগর গাছ রোপণের মাধ্যমে এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নয়ন সম্ভব। এমুহূর্তে এ অঞ্চলটি মিথেন নির্গমনের হার প্রায় শূন্য- যা এ অঞ্চলের গর্বের বিষয়।
গেস্ট অব অনার হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মোঃ সাইদুর রহমান এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার বক্তব্য প্রদান করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ বায়োসেইফটি ও বায়োসিকিউরিটি সোসাইটি এর সাধারন সম্পাদক প্রফেসর ড. মোঃ রাকিবুল ইসলাম এবং ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান, সহকারী অধ্যাপক ও আইসিবিসি’র সেক্রেটারি ড. নিখিল চাকমা ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শেষে টেকনিক্যাল সেশনে চেয়ার ও কো-চেয়ার হিসেবে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুল মজিদ এবং মেহেরপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. শেখ বখতিয়ার উদ্দীন উপস্থিত ছিলেন।
Comments