তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপরে, পানিবন্দি লাখো মানুষ

উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা ভারী বর্ষণের কারণে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে এই পরিমাণ পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়। এর ফলে লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে, যার কারণে প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, বুধবার সকালে তিস্তার পানি প্রথমে বিপদসীমা অতিক্রম করে ৭ সেন্টিমিটার উপরে ওঠে। পরে কিছুটা কমে ৪ সেন্টিমিটারে নেমে আসলেও রাতের বৃষ্টি ও উজানের ঢলে ভোরের দিকে পানি আবার বেড়ে ১১ সেন্টিমিটার উপরে উঠে। বৃহস্পতিবার দুপুরে তা ১৮ সেন্টিমিটারে পৌঁছায়। আগামী দুই দিন ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢল অব্যাহত থাকায় লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
বন্যার কারণে লালমনিরহাটের সদর, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈলমারী, নোহালী, আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্ধন, বাহাদুরপাড়া, পলাশী এবং সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর, বড়বাড়ী ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের নিচু এলাকাগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে রোপা আমনসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত ডুবে গেছে এবং চরাঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা হাতীবান্ধার হলদিবাড়ি চরের আব্দুল মতিন বলেন, “নদীতে পানি বাড়লেই চরাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বর্ষাকালে বন্যার আতঙ্কে থাকতে হয়। রাত থেকে আমরা পানিবন্দি, পানি ক্রমেই বাড়ছে। মাচাংয়ের ওপর বসে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে।” আদিতমারীর চর গোবর্ধনের আজিজুল ইসলাম জানান, “ফসলের ক্ষেত, রাস্তাঘাট ও পুকুর ডুবে গেছে। নৌকা ছাড়া যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে না।”
ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নের আটো চালক সেলিম ইসলাম বলেন, “পানিবন্দি পরিবারগুলো চরম বিপাকে। পশুপাখি, শিশু ও বৃদ্ধরা বিপদে পড়েছে। প্রশাসনের দ্রুত সহযোগিতা প্রয়োজন।” ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান জানান, তাঁর ইউনিয়নের দেড় হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি।
হাতীবান্ধা উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা উত্তম কুমার নন্দী বলেন, “সকাল থেকে পানির উচ্চতা হঠাৎ বাড়তে শুরু করেছে। প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।” হাতীবান্ধার ইউএনও শামীম মিঞা জানান, প্রশাসন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, “ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি বেড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খোলা রাখা হয়েছে।”
Comments