
রাজশাহী মহানগরের রাজনীতিতে হঠাৎ তোলপাড় ফেলে দিয়েছে একটি চাঞ্চল্যকর তালিকা। ‘চাঁদাবাজ’ আখ্যা দিয়ে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াত-শিবিরের পরিচয়ধারী নেতাকর্মীসহ ১২৩ জনের নাম উঠে এসেছে এই তালিকায়।
সোমবার সকাল থেকে তালিকাটি মানুষের হাতে হাতে ঘুরছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে।
যদিও তালিকার উৎস এখনো অস্পষ্ট। তবে বিএনপিসহ বিভিন্ন পক্ষের দাবি, এটি হয় পুলিশের কোনো গোয়েন্দা সংস্থা তৈরি করেছে, নয়তো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা।
তালিকায় বিএনপি ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থকসহ ৪৪ জনের নাম রয়েছে। আওয়ামী লীগের ২৫ জন এবং জামায়াতের ছয়জনের নাম আছে। বাকি ব্যক্তিদের রাজনৈতিক পরিচয় দেওয়া হয়নি, তবে তাদের ‘সুবিধাবাদী’ হিসেবে বলা হয়েছে।
তালিকায় রয়েছেন রাজশাহী সিটি কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব এমদাদুল হক লিমনের নাম। তার সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি ৫ অগাস্টের ঘটনার পর থেকে আওয়ামী লীগ অনুসারীদের মামলা দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন এবং কোচিং সেন্টার থেকে চাঁদা তুলেছেন।
মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বচলুর রহমান মন্টু সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনিও ৫ অগাস্টের পর থেকে মামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করেছেন।
একইভাবে, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আরিফুল শেখ রবির বিরুদ্ধে নগরের ফুটপাত থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়ের অভিযোগ আছে।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তালিকায় থাকা বিএনপি নেতারা। তালিকায় ছয় নম্বরে থাকা বজলুর রহমান মন্টু বলেন, “এটি বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ তালিকা করে প্রকাশ করা হয়েছে।”
সিটি কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব (তালিকায় ৮ নম্বরে) এমদাদুল হক লিমন বলেন, “আমার নাম দেখে আমি হতবাক। আমি রাজনীতি করি আদর্শ নিয়ে, কোনো চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত নই। কেউ বলতেও পারবে না।”
তালিকাটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ আলী ইশা।
তিনি বলেন, “কে করেছে, সেটি আমরা জানি না। তবে পুলিশের কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছি। তার কাছে যে কল রেকর্ড, তথ্য ছিল, তিনি সেগুলো দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন। আমি বলেছি, তদন্ত করে নিশ্চিত হোন, যেন নিরীহ কেউ হয়রানির শিকার না হয়।”
রাজশাহী মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মণ্ডল বলেন, “তালিকায় যাদের নাম রয়েছে, তাদের আমরা আগেই দল থেকে বয়কট করেছি।”
এদিকে, তালিকায় থাকা অন্তত ১৮ জনের বিরুদ্ধে সম্প্রতি রাজশাহীতে দায়ের হওয়া একটি চাঁদাবাজির মামলায় নাম রয়েছে। মামলার বাদী আবাসন ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান। গত শুক্রবার নগরের বোয়ালিয়া থানায় দায়ের করা তার মামলায় ছাত্রদল ও যুবদলের কয়েকজন নেতাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। তারা এই মামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আবু সুফিয়ান বলেন, “তালিকা বড় বিষয় নয়। চাঁদাবাজি যে হচ্ছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে এমন তালিকা তৈরি করে পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থাও থাকে। যদি কেউ প্রকৃতপক্ষে চাঁদাবাজ হয়, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আবার নিরীহ কারো হয়রানি আমরা চাই না।”
তালিকাটি পুলিশের তৈরি কি-না এ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। বিএনপির এক নেতা দাবি করেন, “তালিকায় পুলিশের স্বাক্ষর ছিল, আমি নিজ চোখে দেখেছি।”
Comments