
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ প্রশাসনে ব্যাপক রদবদলের পথে হাঁটছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ স্তর জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে ইতোমধ্যে ছয়টি জেলায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আরও বেশ কয়েকটি জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।
নির্বাচন কমিশনকে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ইতোমধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনও এই লক্ষ্যে প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে। নির্বাচনকালীন সময়ে ডিসিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, বিশেষ করে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে। তবে আসন্ন নির্বাচনে ডিসিদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি নির্বাচন কমিশন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, “যদি ডিসিদের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়, তবে তাদের ভূমিকা নির্বাচনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। এ কারণে যোগ্য কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।” তিনি আরও জানান, “আমাদের ফিটলিস্ট আছে। কিছু নতুন ডিসি পদায়ন হয়েছে, সামনে আরও হবে।”
গত ২৫ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ছয়টি জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। নিয়োগপ্রাপ্ত জেলাগুলো হলো—পটুয়াখালী, কুষ্টিয়া, কুড়িগ্রাম, মেহেরপুর, নেত্রকোণা ও খুলনা। এর মধ্যে তিনজন নতুন কর্মকর্তাকে ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং তিনজন ডিসিকে বদলি করা হয়েছে।
নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হলেন:
পটুয়াখালী: পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. মোহাম্মদ শহীদ হোসেন চৌধুরী।
মেহেরপুর: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল ছালাম।
নেত্রকোণা: ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার (উপসচিব) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান।
বদলি কর্মকর্তারা হলেন:
কুষ্টিয়া: পটুয়াখালীর ডিসি আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন।
খুলনা: কুষ্টিয়ার ডিসি মো. তৌফিকুর রহমান।
কুড়িগ্রাম: মেহেরপুরের ডিসি সিফাত মেহনাজ।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ডিসি পদে ২৪তম, ২৫তম ও ২৭তম বিসিএসের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন। ২৪তম বিসিএসের কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে ২৮তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নতুন ডিসি নিয়োগের পরিকল্পনা করছে মন্ত্রণালয়। এছাড়া, ২৭তম বিসিএসের কিছু কর্মকর্তাও ডিসি পদে নিয়োগ পেতে পারেন।
নতুন ডিসি নিয়োগের জন্য ফিটলিস্ট তৈরির কাজ চলছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান জানান, “ডিসি নিয়োগের জন্য সাত সদস্যের একটি জনপ্রশাসন সংক্রান্ত কমিটি এবং পাঁচ সদস্যের ডিসি সিলেকশন কমিটি রয়েছে। ফিটলিস্ট তৈরির পর কমিটিতে উপস্থাপন করা হয়। এরপর প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন সাপেক্ষে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।”
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচনের আগে অনেক যুগ্মসচিব (ডিসি) পদে পরিবর্তন আনা হবে। যেসব জায়গায় প্রয়োজন, সেখানে নতুন কর্মকর্তারা প্রতিস্থাপিত হবেন।” তিনি স্পষ্ট করেন, ডিসিসহ মাঠ প্রশাসনের ভোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা যদি কোনো ব্যক্তি বা দলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেন, তবে তাকে প্রত্যাহার করে প্রচলিত আইনের আওতায় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মো. মোখলেস উর রহমান জানান, রিটার্নিং অফিসার কারা হবেন, তা তফসিল ঘোষণার পর নির্ধারিত হবে। তিনি বলেন, “ওই সময় সরাসরি যে নির্দেশনা দেওয়া হবে, তার বাইরে কোনো কাজ করতে পারবেন না বা করবেন না।”
এই পরিবর্তনগুলো নির্বাচনকালীন প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গৃহীত হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
Comments