Image description

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রুবাইয়াত কবীর জানান, “প্রাথমিকভাবে ৫.৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে বলে আমাদের কাছে রেকর্ড আছে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ঢাকা থেকে ৩৮০ কিলোমিটার দূরে ভারতের আসাম রাজ্যে, গুয়াহাটি ও হিমালয়ের মাঝামাঝি আসাম ভ্যালি এলাকায়।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হুমায়ুন আকতার জানান, রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ৫.৮, যা মাঝারি থেকে ভারী মাত্রার ভূমিকম্প। ভারত, মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটানেও এই কম্পন অনুভূত হয়েছে। কোনো বড় ক্ষয়ক্ষতির খবর না পাওয়া গেলেও, দক্ষিণ এশিয়ায় সম্প্রতি বেড়ে চলা ভূমিকম্প উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানায়, এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে ছিল। বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে কম্পন অনুভূত হয়। স্থানীয়রা জানান, কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী এই কম্পনে ভবনের জানালা-দরজা কেঁপে ওঠে, যার ফলে অনেকে ভয়ে বাইরে ছুটে আসেন।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্পের মাত্রা ৫ দশমিক ৮ বললেও যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস বলছে, এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৯। উৎপত্তিস্থল ভারতের আসাম রাজ্যের উদলগুড়ি থেকে ১৪ কিলোমিটার পূর্বে। এর উৎপত্তি হয়েছে ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে।

ইউএসজিএস জানায়, ভূমিকম্পটি স্ট্রাইক-স্লিপ ধরনের, যা ইন্ডিয়ান ও ইউরেশিয়ান টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফল। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, মিয়ানমারের মান্দালয় এবং নেপালের কিছু অংশেও কম্পন অনুভূত হয়েছে।

ভূমিকম্পের সময় আসামের রাজধানী গুয়াহাটির অনেক বাসিন্দা আতঙ্কে বাড়িঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসেন। সেখানকার স্থানীয় এক বাসিন্দা দেশটির সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছেন, ‘‘মনে হচ্ছিল এই কম্পন কখনও থামবে না।’’

আরেক বাসিন্দা বলেন, কিছুক্ষণের জন্য মনে হয়েছিল, আমি মারা যাচ্ছি। ভেবেছিলাম সত্যিই ছাদ ভেঙে পড়বে। আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সানওয়াল এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, আসামে বড় ভূমিকম্প হয়েছে। সবার মঙ্গল কামনা করছি।

দক্ষিণ এশিয়ায় ভূমিকম্পের ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ৫৩টি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে, যা গত আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত মার্চে মিয়ানমারে ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ২ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়। এই কম্পনের প্রভাব বাংলাদেশ, ভারত ও থাইল্যান্ডে পড়েছিল। এপ্রিলে ভারত, মিয়ানমার ও তাজিকিস্তানে এক ঘণ্টায় চারটি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়, যার মধ্যে মিয়ানমারে একটি ছিল ৫.৫ মাত্রার।

ভূতত্ত্ববিদরা জানান, বাংলাদেশ ৮টি সক্রিয় ফল্ট জোনের মধ্যে অবস্থিত, যার মধ্যে ডাওকি ও মাদুপুর ফল্ট উল্লেখযোগ্য। ২০২৪ সালে ভূমিকম্পের সংখ্যা বৃদ্ধি বড় ধরনের কম্পনের সম্ভাবনা বাড়িয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রুবাইয়াত কবীর বলেন, “ছোট-মাঝারি ভূমিকম্পের হার বাড়ছে। প্রস্তুতি জোরদার করা জরুরি।”

সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ জনগণকে ভূমিকম্পকালে ‘ড্রপ, কভার অ্যান্ড হোল্ড অন’ নীতি অনুসরণ এবং ভবন নির্মাণে ভূমিকম্প প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার এই অঞ্চল ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও বার্মা প্লেটের সংঘর্ষস্থলে থাকায় ভূমিকম্পের ঝুঁকি সবসময়ই উচ্চ। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এ ধরনের ঘটনা বাড়লে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা থেকে যায়।