Image description

রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা চরম আবাসন সংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। ছেঁড়া তাঁবু, পরিত্যক্ত ভবন এবং অতিরিক্ত জনবলের চাপে অস্বাস্থ্যকর ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে বাস করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ব্যারাক ও কোয়ার্টারের সংকট এতটাই প্রকট যে, এটি পুলিশ সদস্যদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

গত ২ জুলাই রাজারবাগ পুলিশ লাইনে সরেজমিনে দেখা যায়, পুকুরের পূর্বপাশে তাঁবু দিয়ে ঘেরা গোডাউনের মতো দুটি ঘরে পুলিশ সদস্যরা বাস করছেন। তাঁবুর প্রবেশপথের কাপড় ছেঁড়া, যা দরজা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভেতরে তিন সারিতে ৩৪টি চিকন চৌকি সাজানো, দুটি চৌকির মাঝে দাঁড়ানোর মতো সামান্য জায়গা। তাঁবুর খুঁটিতে ঝোলানো রশিতে পোশাক ঝুলছে। বৃষ্টির পানি তাঁবু দিয়ে চুইয়ে পড়ে, মশার উপদ্রব তো রয়েছেই। কনস্টেবল পিয়ার মাহমুদ বলেন, “তাঁবুতে প্রচণ্ড গরম, মাঝের সারিতে ফ্যান নেই। পোশাক ঝুলছে, থাকার জায়গার সংকট।”

রাজারবাগে ৯টি ব্যারাকের ধারণক্ষমতা ৫ হাজার ২১৫ জন হলেও সেখানে বাস করছেন ৮ হাজার জন, অর্থাৎ ৩০ শতাংশ অতিরিক্ত সদস্য। এছাড়া, তাঁবু দিয়ে ঘেরা চারটি ঘরে ১৮১ জন এবং একটি পরিত্যক্ত পাঁচতলা ভবনে ৮৯৯ জন থাকছেন। এই ভবনটি, যা একসময় অস্ত্রাগার ছিল, এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ব্যারাক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভবনের ছাদ ও দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। কনস্টেবল শামীম আহমেদ বলেন, “ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও উঠেছি, কারণ থাকার জায়গা নেই।”

ডিএমপির ২০টি ব্যারাকের ধারণক্ষমতা ৯ হাজার ২৯৫ জন, কিন্তু সেখানে বাস করছেন ১৩ হাজার ১১৩ জন, অর্থাৎ ৪১ শতাংশ অতিরিক্ত। মোট জনবল ৩৪ হাজার ২৪৪ জনের মধ্যে ৩২ হাজার ৩১৯ জন কর্মরত। তাদের জন্য কোয়ার্টারে ফ্ল্যাট রয়েছে মাত্র ৮২৯টি, যা মোট জনবলের ২ দশমিক ৭২ শতাংশ। কনস্টেবল ও নায়েকদের জন্য ৩৫৪টি ফ্ল্যাট, এএসআইদের জন্য ৬০টি, এসআই ও সার্জেন্টদের জন্য ৩২৭টি, পরিদর্শকদের জন্য ১০টি এবং এডিসি ও এসিদের জন্য ৭৮টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ফলে ৯৭ দশমিক ২৮ শতাংশ জনবলের জন্য সরকারি বাসা নেই।

মিরপুর পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) বিভাগেও একই অবস্থা। পূর্ব বিভাগের তিনটি ফ্লোরে ধারণক্ষমতা ১৮০ জনের, কিন্তু থাকছেন ৩১৫ জন। পশ্চিম বিভাগের ২১টি ইউনিটে ১ হাজার ৫০ জনের পরিবর্তে ১ হাজার ৩৬৩ জন এবং উত্তর বিভাগের ২৯টি ইউনিটে ১ হাজার ৪৫০ জনের পরিবর্তে ১ হাজার ৭৩৬ জন থাকছেন। দক্ষিণ বিভাগের ২৮টি ইউনিটে ১ হাজার ৪০০ জনের পরিবর্তে ১ হাজার ৬৯৯ জন বাস করছেন। 

পিওএমের যুগ্ম কমিশনার খন্দকার ফরিদুল ইসলাম বলেন, “২ নম্বর ব্যারাক ভবন অনেক পুরাতন ও নাজুক। ঝুঁকি নিয়েই ফোর্স থাকছে। এটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে থাকার জায়গা পাব কোথায়?”

ডিএমপির ৫০টি থানার মধ্যে ১৪টি ভাড়া বাড়িতে চলছে। প্রতিবছর ভাড়া বাবদ ব্যয় হয় প্রায় ৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা। ৫২টি ফাঁড়ির মধ্যে ৮টি ভাড়া ভবনে এবং ২৯টি অন্যান্য স্থাপনায় কার্যক্রম চালাচ্ছে।

ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, “জনবল বৃদ্ধির সঙ্গে নতুন ভবন ও ব্যারাক নির্মাণের চেষ্টা চলছে। থানার জন্য নিজস্ব জায়গা খোঁজা হচ্ছে।”

পুলিশ সদস্যরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে চলা এই সংকটের কারণে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে হচ্ছে। ব্যারাকে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত সদস্য থাকায় হতাশা ও মানসিক চাপ বাড়ছে। অনেকে পরিবার থেকে দূরে থাকায় মানসিক অস্থিরতায় ভুগছেন। 

এসআই মজনু মিয়া বলেন, “পরিবারকে ঢাকায় আনা সম্ভব হয়নি, কারণ খরচ চালানো কষ্টকর। বছরে তিন-চারবার ছুটি নিয়ে বাড়ি যাই।”